এইমুহুর্তে অর্ক বা মহুল কেউই বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু... হ্যাঁ ওই কিন্তুতে এসেই সবকিছু আটকে গেলো। অল্প দিনের চাকরি, সেভিংসও তেমন একটা নেই সেই জন্য তড়িঘড়ি করে রেজিস্ট্রিতেই সারতে হলো কাজটা। সদ্য যে কুঁড়িটা মহুলের গর্ভে বেড়ে উঠছে একটু একটু করে তার জন্যই। দুজনের কেউই তাদের প্রেমের প্রথম সন্তানকে হারাতে চায়নি। বেশ ভালোই কাটছিলো কদিন। গোল বাধলো ডাক্তারী পরীক্ষায় যখন জানা গেল মহুল থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার। অর্ক মহুলকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো যে এটা এমন কিছু সমস্যার নয়। মহুল কখনও বোঝে আবার কখনও ভাবে তার দোষেই তো সবকিছু। সেদিন একান্তে নিরালায় অসংযমী হয়ে ও যদি ওইভাবে অর্ককে জোর না করতো...!!!
ডাক্তারের পরামর্শে অর্কেরও পরীক্ষা করা হলো। কিন্তু ভাগ্যের ফের, অর্কও থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার। এবার কে কাকে সান্ত্বনা দেবে! পুরো ঘর জুড়ে নৈঃশব্দিক নিস্তব্ধতা। মাথা কাজ করছে না। কারও সাথে কোনোরকম আলোচনা করবার মতো অবস্থাও নেই। দুজন থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ারের সন্তান তো থ্যালাসেমিয়া পজিটিভ-ই হবে। একে হঠাৎ বিয়ে তার উপর এইরকম একটা পরিস্থিতি মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। কী করবে ওরা! শেষমেশ কঠিন সিদ্ধান্তটা ওরা নিয়েই ফেললো। না, যত কষ্টই হোক কোনোভাবেই ওরা তাদের সন্তানকে জেনে বুঝে এমন একটা স্বল্প আয়ুর দুর্বিসহ জীবন দিতে পারবে না। তাও মনের দ্বন্দ্বটা কিছুতেই যেন দূর হয় না মহুলের। মা তো!
পরের দিন ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, চিন্তায় দুজনেই সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারলো না। ডাক্তার অবশ্য একটা ক্ষীণ আশার কথা শোনালেন, একটা ন্যূনতম সম্ভাবনার কথা... ভ্রূণের থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার কথা।
আজ সেই রিপোর্টটা আসার কথা। অর্ক-মহুলের নাওয়া-খাওয়া সব মাথায় উঠেছে। সন্ধের দিকে ডাক্তারের চেম্বার থেকে ফোনটা এলো। এই কদিনের বন্ধ ঘরের ভ্যাপসা ভাবটা কেটে বৃষ্টি নামে যেন। চোখটা জলে ভরে যায় মহুলের... না মিরাকল হয়, ঈশ্বর চাইলে মিরাকল হয়। একটা মায়ের মনমধ্যের অসহ্য এক দ্বন্দ্বের অবসান। তাদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার হলেও থ্যালাসেমিয়া পজিটিভ নয়। মহুলের হাত দুটো পরম ভক্তিতে আপনা থেকেই জড়ো হয়ে কপালে গিয়ে ঠেকে...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন