'আজও ট্রেনলেট' । কথাটা শোনামাত্রই অনিন্দ্য'র মনে হল গলাটা তার চেনা। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে রীনা বসে আছে পাশে। অনিন্দ্য মাফলার পরে থাকায় দেখতে পায়নি । হাওড়া স্টেশনের ঘড়িতে তখন ৮ টা ১৫ মিনিট। ৮টা ১০-এর আপ খড়গপুর-হাওড়া লোকাল ধরে অনিন্দ্য রোজই উলুবেড়িয়া যায়। সেখানকার একটি ছাপাখানায় ডিটিপি'র কাজ করে। চাকরিবাকরি না পেয়ে এই কাজটাই নিয়েছে । নিজেকে আরও আড়াল করে আড়চোখে দেখে নেয় রীনাকে। রীনা বোধহয় আজও বিয়েথা করেনি। পাঁচ বছর আগের কথা অনিন্দ্যর মনে ভীড় করতে থাকে।
রীনা যখন বি-এ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তখন ওকে ইংরেজি
পড়াত। জায়গাটা কলকাতার হাজরা। দিনটার কথা আজও মনে আছে। রেজাল্ট বেরিয়েছে। ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে রীনা। বেশ হৈচৈ
হচ্ছে বাড়িতে । রীনার মা চা নিয়ে রীনার রুমে ঢুকে বলে গেলেন, ‘অনিন্দ্য, একবার রীনার বাবার সঙ্গে দেখা করে
যেও’। অনিন্দ্য ঘরে ঢুকতেই অনুপ মল্লিক 'কাল থেকে আর এসো না' বলে হাতে ধরিয়ে দিলেন একটি খাম।
অনিন্দ্য আর দাঁড়ায়নি। দরজা ঠেলে বেরিয়ে এসেছে।
রীনার মুখ থেকে 'আজও ট্রেনলেট' শুনে অনিন্দ্যর বুঝতে অসুবিধা হল না রীনা চাকরি করে।
কিন্তু কোথায় ? একবার ভাবল রীনার সাথে কথা বলবে । কিন্তু
পরক্ষণেই অভিমানে সরে আসে, 'না, থাক' । ওদিকে রীনা কখন যে
প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চ থেকে উঠে গেছে সে খেয়াল করেনি। ৮টা ১০-এর ট্রেন প্ল্যাটফর্ম
ছাড়ল ৮টা ২৭-এ।
উলুবেড়িয়া স্টেশনে নেমে অনিন্দ্য হাঁটতে থাকে। কিন্তু
তার পা যেন নড়তে চায় না। বুকের ভিতরটা খাঁখাঁ করে ওঠে। বুকপকেটে রাখা রোজকার সঙ্গী
সেই খাম থেকে টুকরো
কাগজটা বের করে পড়ে, 'রীনা, আমাদের সম্পর্কটা বাড়িতে
জানিয়েছ ?' অনিন্দ্য'র দু'চোখের পাতা ভিজিয়ে জলের ধারা
নামে। মাথার উপর দিয়ে কা-কা করে ডাকতে ডাকতে একটি কাক উড়ে যায় ।
বেশ ভালো লাগলো লেখাটা
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন