ভালোবাসার রঙ - ঋতম পাল



সময়ের প্রবাহে শীতের আমেজ কেটে গিয়ে সারা কলকাতা জুড়ে এখন বসন্তের আবির্ভাব হয়েছে। গাছে গাছে ফুল, নীল আকাশ, কোকিলের মিষ্টি মধুর স্বরে কলকাতা শহর এখন মুখরিত। আর বসন্ত মানেই হলো বাঙালির প্রিয় উৎসব দোলযাত্রা। 

                  আজ দোলের দিন। চারিপাশ রঙে রঙে ভরে গেছে। জানালার ধারে মনখারাপ করে একা একা দাঁড়িয়ে আছে রিমা। আজ এই শুভদিনে একমাত্র তারই মনখারাপ, কারণ আজ থেকে প্রায় ২বছর আগে তার প্রেমিক তথা স্বামী স্বপ্ননীল তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তাই এই রঙের দিনে রিমার পরনে কোনো রঙের শাড়ি নেই। আছে শুধু একটি সাদা শাড়ি। 

                 বাড়ির শ্বাশুড়ীমা, পিসিমাদের নিধান অনুযায়ী মেয়ের স্বামী মারা গেলে, তাদের পরনে কোনো রঙ মানায় না, বিধবাদের পরনে শুধুমাত্র সাদা রঙটাই সম্বল, আর আছে শুধু একরাশ হতাশা। এই হতাশা সে অনেক আগেই কাটিয়ে উঠেছে। সে এখন তার নিজের চেষ্টায় একটা চাকরি করে নতুন জীবন পেয়েছে। কিন্তু এই দোলের দিনে স্বপ্ননীল এর কথা মনে পড়ে তার। নীল এর সাথে কাটানো দোলের দিন, ভালোবাসার মুহুর্তগুলো রিমাকে যেনো আঁকড়ে ধরে। 

                   তবে রিমার মনে পড়ে নীল বলতো সবসময় তাকে যে- " যদি কখনো দেশরক্ষার কাজে আমাকে প্রাণ দিতে হয়, তবু তোমার জীবন থেকে যেনো কোনোদিন কোনো রঙ হারিয়ে না যায়। আমি যেখানেই থাকিনা কেনো তোমার ওপর আমার নজর সরবেনা, সবসময় তোমাকে দেখবো। "

এই কথাগুলো আজ যেনো রিমা কিছুতেই ভুলতে পারছেনা, আর সমানে তার দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। 

              কিছুক্ষণ পর, রিমার মেয়ে মিঠি ছুটে আসে রিমার কাছে। রিমাকে জড়িয়ে ধরে আর বলে- " মা, তুমি কাঁদছো কেনো?"

তখন রিমা বলে- " ওই কী একটা যেনো পড়লো চোখে, তাই চোখ থেকে জল বেরোচ্ছে "

কিন্তু মিঠি বুঝতে পারে তার মায়ের মনের কষ্টটা। মিঠি খুব ভালো করে জানে যে তার বাবার কথা মনে পরছে বলেই তার মা কষ্ট পাচ্ছে। আর মিঠি এটাও জানতো যে তার বাবার সাদা রঙ একদমই পছন্দ নয়, রঙিন জিনিস তার বাবা খুব ভালোবাসতো। 

 

                 তাই চুপিচুপি মিঠি গিয়ে হাতে করে একমুঠো আবির এনে তার মায়ের গালে মাখিয়ে দেয়। রিমা প্রথম দিকে একটু অবাক হলে মিঠি বলে- " বাবার ইচ্ছা পূরণ করলাম মা।" 

রিমা অবাক হয়ে যায় যে এই ছোটো বয়সে তার মেয়ে যেটা বুঝতে পারলো, সে সেটা এতদিন ধরে বুঝেও সেই ইচ্ছাটা পূরণ করেনি কখনো, তাই মেয়ের ইচ্ছা সর্বোপরি তার স্বামীর ইচ্ছাকে সম্মান দিতেই সাদা শাড়ির বদলে রঙিন শাড়ি পরে রিমা আর হাতে করে একমুঠো লাল আবির নিয়ে গিয়ে নীল এর ছবির সামনে দাঁড়ায় আর নীল এর ছবিতে নীল এর দুই গালে আবির মাখিয়ে দেয়। লাল রঙটা নীল এর বরাবরই ভীষণ প্রিয় রঙ। আর নীল এর ইচ্ছা পূরণ করতেই লাল আবিরে নিজেকে সাজিয়ে তোলে রিমা। এভাবেই দোলের দিন নীল এর অনুপস্থিতিতেও নীল এর উপস্থিতি অনুভব করে রিমা আর নিজেকে সাথে নীলকেও রাঙিয়ে তোলে নিজেদের ভালোবাসার রঙে। 


 

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন