গ্রীষ্মে আমের রকমারি - বাণী মিত্র


যে কোনও ঋতুতে ঋতুকালীন ফল খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্বাস্থ্যবিদরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন গ্রীষ্মের ফলের কথা বলতে গেলেই সবার আগে মনে পড়ে যায় ফলের রাজা আমের নাম ভারতের জাতীয় ফল আম মানেই শুধুমাত্র পাকা মিষ্টি আমের খাবার নয় কাঁচা টক আম দিয়েও বিভিন্ন রকমের পদ বানানো হয় গ্রীষ্মের শুরু হয় বৈশাখের আগমনে বৈশাখ মাস আসার সাথে সাথেই আপামর বাঙালির মনে পড়ে যায় কবিগুরুর জন্মদিনের কথাও তাই আজ আমের কিছু লোভনীয় পদের বিষয়ে লিখতে গিয়ে কবিগুরুকে স্মরণ করে তাঁরই সবচেয়ে প্রিয় পদআম দিয়ে গাছ পাঁঠার কষারান্নার প্রণালী দিয়েই শুরু করব সাথে দিলাম আরও কিছু রসালো লোভনীয় ও অত্যন্ত সহজে বানানো যায় আমের এমন কিছু রান্নার খোঁজ

 

কবিগুরুর প্রিয় পদ “আম এঁচোড়



খাদ্যরসিক হিসাবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুনাম সর্বজনবিদিত। ঠাকুরবাড়িতে তাঁর জন্য বিভিন্ন উৎসবে অনুষ্ঠানে নতুন পদ রান্না হত। সেই সব রান্নার উপকরণ ও প্রনালীর নতুনত্ব এবং শৈল্পিক নামের জন্য আজও বাঙালি হেঁশেলে তাদের মহা সমাদরে স্মরণ করা হয়। এমনই সহজলভ্য ও সহজ প্রক্রিয়াজাত একটি রান্না হল "আম - এঁচোড়"।      

 উপকরণঃ

  • এঁচোড় - ৫০০ গ্রাম
  • পটল -২৫০ গ্রাম
  • কাঁচা আম ১০০ গ্রাম
  • ঘি ২৫ গ্রাম
  • নুন পরিমাণ মত
  • গোটা জিরে - ১ চা-চামচ
  • শুকনো লঙ্কা৩ টে
  • সরষের তেল২০০ মিলি
  • চিনি -পরিমাণ মত
  • হিং ১ চা চামচ

 প্রণালীঃ

. আলু, পটল, এঁচোড় টুকরো টুকরো করে কেটে ভালো করে জলে ভাপিয়ে নিয়ে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে।

. শুকনো কড়াইতে জিরে ও শুকনো লঙ্কা ভেজে গুঁড়ো করে রাখতে হবে।

. কড়াইতে সর্ষে তেল গরম করে প্রথমে হিং দিয়ে তারপর একটা শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে ভেজে নিতে হবে।

. এর মধ্যে কাঁচা আম দিয়ে ভালো করে ভেজে নিয়ে অল্প জল যোগ করে ঢাকা দিয়ে আম নরম করে নিতে হবে।

. আম সেদ্ধ হয়ে গেলে কড়াইতেই চটকে নরম করে তাঁর মধ্যে সেদ্ধ করে রাখা আলু, পটল এবং এঁচোড় দিয়ে দিতে হবে।

. ভাল করে কষিয়ে নুন, চিনি ও ভাজা মশলা যোগ করে আধা কাপ জল দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে।

. সব সব্জি মশলার সাথে ভালো করে মিশে গেলে আঁচ বন্ধ করে ঘি দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।


আম খারওয়াসঃ



গুজরাতের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মিষ্টি হল আম খারওয়াস হাতে গোনা মাত্র চারটি উপকরণ দিয়ে খুব সহজেই বানানো যায় এটি

উপকরণঃ

  • দুধ১ লিটার
  • চিনি২৫০ গ্রাম
  • আমের ক্বাথ২০০ মিলি
  • আমের কুচি২০০ গ্রাম
  • কর্ণ ফ্লাওয়ার৩ চা চামচ

 

প্রণালীঃ

 . দুধের মধ্যে চিনি দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে ঘন করে নিতে হবে

. অল্প ঠাণ্ডা দুধে কর্ণ ফ্লাওয়ার গুলে রেখে দিতে হবে 

. ১ লিটার দুধ ঘন হয়ে ৫০০ মিলি হলে, এর মধ্যে আমের ক্বাথ ও কর্ণ ফ্লাওয়ার গোলা মিশিয়ে খুব ভালো করে নাড়াতে হবে

. আমের সাথে দুধ ভালো করে মিশে গেলে একটা অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে তেল মাখিয়ে তার মধ্যে আম-দুধের মিশ্রণ ঢেলে দিতে হবে এর মধ্যে আমের টুকরোগুলো দিয়ে দিতে হবে

. বড় কড়াইতে জল দিয়ে ছাঁকনির উপর পাত্র বসিয়ে ঢাকা দিয়ে ২০ মিনিট রান্না করতে হবে এই প্রণালীটি ওভেনেও করা যায় ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ১০ মিনিট দিতে হবে

. ২০ মিনিট পর আমদুধের মিশ্রণ জমে গেলে নামিয়ে ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করতে হবে ঠাণ্ডা হয়ে গেলে কেটে টুকরো করে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে 


আম্রখণ্ডঃ 


আম্রখণ্ড বা আম-শ্রীখণ্ড মহারাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় মিষ্টি গুজরাতেও এই মিষ্টির প্রচলন আছে শ্রীকৃষ্ণের পছন্দের খাবার রূপে পরিচিত এই খাবারটি কৃষ্ণের আরাধনায় প্রসাদ হিসাবেও এই খাবার উৎসর্গ করা হয় গুজরাতে লুচির সাথে আম্রখণ্ড খাবার চল আছে   

উপকরণঃ

  • টক দই - ৩০০ গ্রাম
  • চিনি - ২০০ গ্রাম
  • আমের ক্বাথ ২৫০ গ্রাম
  • কেশর এক চিমটি
  • গুঁড়ো দুধ - ২ টেবিল চামচ
  • জায়ফল গুঁড়ো — ১/২ চা চামচ
  • কাজু বাদাম -/৭ টি
  • আমন্ড -/৭ টি
  • পেস্তা /৭ টি

 প্রণালীঃ

 

. দুধ অল্প গরম করে কেশর ভিজিয়ে রাখতে হবে

. চিনি মিহি করে গুঁড়ো করে নিতে হবে

. ঘরে পাতা টক দই একটা মসলিন কাপড়ে ভাল করে বেঁধে, নোড়া চাপা দিয়ে অথবা উঁচু থেকে অন্তত দু’ঘণ্টা ঝুলিয়ে রেখে টক দইয়ের সমস্ত জল ঝরিয়ে নিটে হবে

. একটা বড় বাটিতে জল ঝরানো টক দই নিতে হবে ব্লেন্ডার দিয়ে দই ফেটিয়ে ক্রিম বানিয়ে নিতে হবে

. এর মধ্যে একে একে চিনি গুঁড়ো, জায়ফল গুঁড়ো, কেশর ও কেশর ভেজানো দুধ মিশিয়ে ভাল করে নেড়ে নিতে হবে

. তাতে আমের ক্বাথ, অর্ধেক কাজু বাদাম, পেস্তা ও আমন্ড কুচি মিশিয়ে নিতে হবেদই এবং সমস্ত উপকরণ মিলেমিশে মিহি হয়ে যাবে। ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করতে হবে  

. পরিবশেন করার পাত্রে আম্রখণ্ড রেখে উপরে বেশ খানিকটা সমস্ত বাদাম কুচি কুচি ছড়িয়ে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আম্রখণ্ড পরিবেশন করতে হবে


 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন