শিয়ালদহ স্টেশন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা। তখন রাত এগারোটা। রসিক শেষ ট্রেন ধরার জন্য প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছেন। যথেষ্ট লোক ছিল স্টেশনে। একজন ভিখারী তার কাছে এসে হাত পেতে মুখের দিকে চেয়ে দাঁড়ালেন। রসিকের মায়া হল। পকেট থেকে দশ টাকার একটি নোট বের করে দিলেন। খুশি হয়ে ভিখারীটি অন্য আরেক জনের কাছে গেলেন। হঠাৎ একজন আগন্তুক এসে তাকে বললেন --- " আপনি টাকাটা জলে ফেললেন। ওরা এভাবে ভিক্ষা করে সেই টাকায় নেশা করে, লোটো খেলে, লটারির টিকিট কাটে। আমরাই ওদের এই সব নেশার দিকে ঠেলে দিচ্ছি। দিলে খাবার দেবেন টাকা দেবেন না। কাজ করার ক্ষমতা থাকলেও এরা ভিক্ষাবৃত্তিকে জীবনের পেশা করে নিয়েছে। এর থেকে সহজ উপায়ে উপার্জন আর নেই। " আগন্তুকের কথাগুলো সেদিন রসিকের বিশ্বাস হয় নি। তিনি ভাবেন, " সবাই এমন করেন না। ভিক্ষা করে আর কত জোটে!"
পরদিন অফিসে যাওয়ার সময় শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেরিয়ে রসিক দেখেন গতকালের সেই ভিক্ষুক মদ খেয়ে নেশায় টলছেন আর গালিগালাজ করছেন। হাতে তার একগুচ্ছ লটারির টিকিট। রসিক বুঝতে পারেন গতকালকের আগন্তুক ব্যক্তিই ঠিক কথা বলেছেন। তিনি আরো বুঝতে পারেন আজকালকার দিনে মানুষ চেনা খুবই কঠিন। বেশিরভাগই ছদ্মবেশী।
অফিসের টিফিনের সময় খবরের কাগজ দেখছিলেন রসিক। দেখতে দেখতে একটা প্রতিবেদনের প্রতি দৃষ্টি আটকে যায় তার। শিরোনাম ছিল "মৃত ভিখারীর বালিশ থেকে মিলল দুলক্ষ টাকা ও একাধিক ব্যাঙ্কের পাশবই"। প্রতিবেদনটি পড়ে রসিকের চক্ষু চড়কগাছ। বাড়ি ফেরার সময় গতকাল রাতের থেকে আজ পর্যন্ত তিনি যা যা দেখেছেন তা মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে। রসিক সিদ্ধান্ত নেন কোনো সুস্থ-সবল মানুষকে তিনি আর কখনো ভিক্ষা দেবেন না। ভিক্ষাবৃত্তি আমাদের সমাজের অভিশাপ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন