একটি শিশুর জন্মের ছয়মাস পর থেকে অল্প পরিমাণে শক্ত খাবার দেওয়া শুরু করা হয়। আট মাসের পর থেকে খাবারের তালিকায় মাছকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শরীরের বিভিন্ন কাজের জন্য দায়ী এনজাইম গঠনের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড একটি শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা এবং বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এটি স্মৃতিশক্তি উন্নত করে এবং মনোযোগকে তীক্ষ্ণ করে। এই ফ্যাট শরীরে উৎপাদিত হতে পারে না, এবং তাই, এগুলি খাদ্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা প্রয়োজন। শুরুতে অল্প অল্প পরিমাণে জিওল মাছ সেদ্ধ করে খাওয়ানো উচিত। প্রোটিনের যোগানের জন্য মাছের বিকল্প আর কিছু হয় না। আট মাস বয়েসের পর থেকে শিশুকে অল্প পরিমানে প্রোটিনজাত খাবার হিসাবে মাছ শুরু করা হয়। মাছকে প্রোটিনের অন্যতম উৎস হিসাবে ধরা হয়। শিশুর আহারে মাছ যোগ করার আগে জানা দরকার কোন কোন মাছ শিশুকে দেওয়া যাবে। কোনটি দেওয়া যাবে না।
শিশুর স্বাস্থ্য এবং বৃদ্ধির জন্য মাছের উপকারিতাঃ
১. মাছ প্রোটিনের
একটি শক্তিশালী উৎস। সহজপাচ্য প্রোটিন রূপে শুরুতে শিশুকে মাছ দেওয়া
দরকার।
২. এটি ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। সুতরাং শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রে মাছের
ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৩. মাছ হৃদপিণ্ডকে
স্বাস্থ্যকর রাখে। দৃষ্টিশক্তি স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।
৪. মাছ ভিটামিন A,D,E এবং K এর মত প্রয়োজনীয় ভিটামিনগুলির
জোগান দেয়।
শিশুকে কখন মাছ দেওয়া উচিতঃ
আট মাসের পর শিশুর খাদ্য তালিকায় মাছ অন্তর্ভুক্ত করা
হয়। তবে, বাচ্চার
মাছে কোনওরকম অ্যালার্জি আছে কিনা তা আগে পরীক্ষা করে নেওয়া আবশ্যক। তাই অন্তত ৮
মাস অবধি শুধু দানা শস্যই খাওয়ানো উচিত। দানা শস্য হজম করার ক্ষমতা তৈরি হলে বা
কোনো অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া না হলে ধীরে ধীরে মাছ খাওয়ানো শুরু করা উচিত। যেকোনও
ক্ষেত্রেই কোনও রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে দিয়ে
পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া এবং খাদ্যজনিত অ্যালার্জি সংক্রান্ত কোনওরকম প্রতিক্রিয়া হলে
তা জানানো উচিত।
শুরুতেই শিশুকে একই সময়ে বিভিন্ন ধরনের মাছ খাওয়ানো
যাবে না। পরিবর্তে একই ধরনের মাছ কিছুদিন একটানা খাওয়ানোর পর লক্ষ্য করতে হবে যে
সেই মাছটি খাওয়ার পর শিশুর প্রতিক্রিয়া কিরূপ হয় এবং তারপরেই পরবর্তী অন্য ধরনের
মাছগুলি খাওয়ানোর দিকে অগ্রসর হতে হবে। সেদ্ধ মাছ শিশুদের হজমের জন্য সহজ, সুতরাং শিশুদের মাছ খাওয়ানোর
সবচেয়ে সেরা উপায় হল সেগুলোকে সেদ্ধ করে, তারপর ভালভাবে কাঁটা ছাড়িয়ে নিয়ে চটকে নরম করে
খাবারের মিশিয়ে খাওয়ানো। এছাড়াও অল্প হলুদ ও গোলমরিচ গুঁড়ো ব্যবহার করে মাছটিকে হালকা ভাবে
ভেজে নিয়ে, সেটি
খাওয়ানোর পূর্বে তার মধ্যস্থ কাঁটা ভালভাবে ছাড়িয়ে নিয়ে খাওয়ানো উচিত।
শিশুদের মাছ দেওয়া শুরু করার সময় যে সতর্কতামূলক বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিতঃ
১. রান্না করার
পূর্বে মাছটিকে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
২. উচ্চ মারকারি
উপাদান যুক্ত মাছগুলিকে এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. কেবলমাত্র তাজা
বা জিওল মাছই খাওয়ানো ভালো।
৪. সুশির মত কাঁচা
মাছের পদ এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়।
৫. চিংড়ি, কাঁকড়া জাতীয় খোলযুক্ত খাবার না
দেওয়াই উচিত।
৬. বরফের চালানি
মাছ, সামুদ্রিক
অতিরিক্ত তৈলাক্ত মাছ শিশুকে দেওয়া উচিত না।
কোন কোন মাছ শিশুকে দেওয়া উচিতঃ
১. যে কোনও জিওল
মাছ । যেমন শিঙি, মাগুর, গুলে, তেলাপিয়া প্রভৃতি।
২. জ্যান্ত পোনা
মাছ। টাটকা জ্যান্ত রুই , কাতলা,পার্সে,বাটা, মৃগেল প্রভৃতি ।
শিশুর যদি মাছে অ্যালার্জি থাকে তবে কিভাবে তা বোঝা যাবে?
যখন বাচ্চাকে প্রথমবার মাছ খাওয়ানো শুরু করা হয়, তখন কিছু
নির্দিষ্ট লক্ষণের দিকে নজর রাখা উচিতঃ
১. শিশুর ত্বকের
উপর র্যাশ বা ফুসকুড়ি অথবা অন্য কোনও ত্বকজনিত সমস্যা।
২. মুখ অথবা
জিহ্বার কোনও অংশ ফুলে ওঠা।
৩. বমি হওয়া অথবা
আমাশয় হওয়া।
৪. শ্বাস–প্রশ্বাসের
সমস্যা। কাশি অথবা শ্বাসকষ্ট হওয়া।
এই সমস্ত উপসর্গের কোনও একটি যদি লক্ষণীয় হয় তাহলে সাথে সাথে সেই মাছটি খাওয়ানো বন্ধ করে দিতে হবে এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুকে খাওয়ানোর জন্য মাছের পদঃ
১) মাছ অল্প হলুদ জলে সেদ্ধ করে কাঁটা ভালো করে বেছে নিয়ে নরম করে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। ভাতের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
২) গাজর ও মাছ ( শিঙি, মাগুর, গুলে হলেই ভালো) অল্প হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করে নিয়ে
মিক্সিতে পিষে নিতে হবে। এক চিমটে গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে শিশুকে খাওয়ানো যাবে।
৩) এক বছরের পর শিশুকে অল্প নুন ও হলুদ মাখানো ভাজা
বা বেক করা মাছ খাওয়ানো যাবে।
এছাড়া শিশুর পুষ্টি ও স্বাদের দিকে খেয়াল রেখে অন্য একটি পদ দেওয়া হল।
ডালের জলে কাতলা সেদ্ধ (৯ মাস বয়সের পর থেকে দেওয়া উচিত)
উপকরণঃ
- মুসুরির ডাল
- এক চিমটে রক সল্ট
- এক চিমটে চিনি
- ঘরে বানানো ঘি (না থাকলে মাখন)
- কাতলা মাছের ছোট টুকরো এক পিস
প্রণালীঃ
- মুসুরির ডাল ভালো করে ধুয়ে রক সল্ট দিয়ে পরিমাণমতো জলে সেদ্ধ করে নিতে হবে।
- ডালটা সেদ্ধ হয়ে গেলে ডালের জল আলাদা করে তুলে রাখতে হবে।
- এবার একটা পাত্রে বাড়িতে তৈরি ঘি বা মাখন দিয়ে কাতলা মাছের টুকরোটা ঢাকা দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে ।
- মাছ ভাজা হয়ে গেলে কাঁটা ছাড়িয়ে মাছ আলাদা করে নিতে হবে।
- এবার ডালের জলে ওই কাঁটা ছাড়ানো কাতলা মাছটা দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিতে হবে।
- ভালো করে চটকে একটা মিশ্রণের মতো বানিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন