খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল শুভ্রর। ঘুম ঘুম চোখে জানালার দিকে তাকালো। জানালায় পর্দা না থাকায় বাইরেটা দেখা যায়। মেঘলা আবহাওয়া। মাত্রই বৃষ্টি থেমেছে। কাল অনেক রাতে ঘুম এসেছিল শুভ্রর। তাই এখনো ঘুম কাটেনি পুরোপুরি। শুভ্র উঠে বসলো। আগামী তিন দিন অফিস ছুটি। কাল প্রায় সব সহকর্মী বাড়ী চলে গেছে। বৃষ্টি বেশী ছিল বলে, ও বের হয় নি। এখন রওনা হবে।
শুভ্র আরো আধাঘণ্টা পর রাস্তায় নামল। রাস্তায় এখন জল আর কাদা । চারিদিকে কেমন যেন কুয়াশা কুয়াশা ভাব এই বসন্তেও। খুব ভোর আর বৃষ্টি হওয়ায় বোধহয় রাস্তায় তেমন লোকই নেই। দু’ একটা অটো সাঁই সাঁই করে চলে যাচ্ছে। বাস স্টপ এখান থেকে দশ মিনিটের হাঁটা পথ। শুভ্রর হাঁটতে মন চাইছে না এই কাদা-জল ভেঙ্গে। তাই দাঁড়িয়ে আছে কোনো রিকশা বা ভ্যান বা অটো পাওয়া যায় কিনা। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েও কিছু পেল না।অগত্যা হাঁটা শুরু করলো।
বাস স্টপে এসে একটু থমকে গেল। কোনো মানুষজনের চিহ্ন নেই। গ্রামের ছোট্ট স্টপেজ। এমনিতেই লোক কম থাকে। বাস আসলে কিছু ভিড় হয়, আবার পাতলা হয়ে যায়। অন্য কিছু খোলা না থাকলেও দুটো দোকান মোটামুটি সব সময় খোলা থাকে। আজ তাও নাই।
একটু দাঁড়াতেই বাসের হেড লাইট দেখা গেল। বাস থামলো শুভ্রর একদম গা ঘেঁষে। ও উঠে পরলো। পুরো বাসটা প্রায় ফাঁকা। দু-তিন সিটে লোক আছে। তাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসা।
শুভ্র দ্বিতীয় সিটে বসলো-
জানালার গা ঘেঁষে। বাস চলতে শুরু করলো। শুভ্র খেয়াল করলো বাসের হেলপার আর চালক পাঞ্জাবী পড়া। এমনিতে শুভ্রর কৌতূহল কম। আজ তো ঈদ বা পহেলা বৈশাখ নয়। পাঞ্জাবী পরার কারণ কি তাহলে!
শুভ্র এই ভাবনাকে বেশী বাড়তে পারল না। জানালার ওপারের দৃশ্য ওর মন কেড়ে নিল। ও তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে। বাসে উঠলে ওর কেন জানি মন উদাস হয়ে যায় আর মনে হয় এই বাস যদি কোনদিন না থামতো। বাসে শাঁ শাঁ শব্দে ঘুম এসে যাচ্ছে ওর।
বাস চালক গান ছাড়লো-
Such a lonely day....
And it's mine...
The most loneliest day of my life...
Such a lonely day...
শুভ্রর ঘুম ভাঙল। খুব তৃপ্ত ও ফ্রেশ লাগলো নিজেকে। মগজ নিকোটিন আর কফি চাইছে। বাস এখনো চলছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কত বেলা হল, কতক্ষণ ঘুমিয়েছে। রোদ উঠেছে এরই মাঝে, মিঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। হঠাৎ খেয়াল করলো ও বাইরের কিছু চিনতে পারছে না। চাকুরী জীবনের চার বছর এই পথ ধরেই সে যাওয়া আসা করে। প্রায় সবই তার চেনা। আজ মনে হচ্ছে এই পথে সে আগে কখনও আসেনি। কোথায় আছে বাস তা বোঝার জন্য গুগল ম্যাপ বের করলো। তার লোকেশন থেকে হোম লোকেশনের দুরত্ব দেখার চেষ্টা করলো। গুগল ম্যাপ যা দেখাচ্ছে তার চোখ বিশ্বাস করতে পারছে না। প্রথমে ভাবলো চোখের ভুল। পরে মন দিয়ে দেখলো। গুগল ম্যাপের ফাইন্ডিং কেটে দিয়ে আবার দেখার জন্য ‘হোম টু’ নিজের লোকেশন দিয়ে দেখল। ফলাফল একই এল। হোম লোকেশন বদলে অফিসের লোকেশন করলো।ফলাফল অপরিবর্তীত- অসীম – ইনফিনিটি!
শুভ্র বিভ্রান্ত হয়ে তাকিয়ে আছে ফোন স্ক্রিনের দিকে। হেল্পারের দিকে চোখ গেল। পাঞ্জাবী পরা লোকটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। তার কালো পাঞ্জাবীতে মোষের ছবি আঁকা। মুখে বিগলিত হাসি।
‘স্যার গান চেঞ্জ করে দেই’ , বলে অন্য গান দিল-
“ও গান ওয়ালা...
আরেকটা গান গাও...
আর আমার কোথাও যাবার নেই...
কিচ্ছু করার নেই...”
শুভ্র গা এলিয়ে দিল।
বিষয়টা সুন্দর। প্রকাশভঙ্গীও বেশ তবে কিছু বানানে সমস্যা আছে। আর একটি বিষয় বলব যেখানে হিন্দি প্রতিশব্দ ব্যবহার করেছেন...আধাঘন্টা আর পহেলা বৈশাখ। বাংলায় আধঘন্টা আর পয়লা বৈশাখ। ঈদ বর্ধমানে ইদ লেখা হয়...
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন