একটি শিশুকে ভবিষ্যতের জন্য সঠিকভাবে গড়ে তুলতে গেলে
শুধুমাত্র তার পড়াশোনার প্রতি যত্নশীল হওয়াই যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি তার মধ্যে
সঠিক স্বভাব, সহবত শিক্ষা এবং শৃঙ্খলাবোধ তৈরী করা
সমানভাবে প্রয়োজন। শিশু মনোবিদদের মতে, চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলাবোধ অত্যন্ত
জরুরী, আর তা শিশুকে শেখানো উচিত একেবারে প্রথম থেকে।
২) সবসময় “না” বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিষিদ্ধ জিনিসের ওপর মানুষের কৌতূহল স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়। বাচ্চার কোনো কাজের বিরোধিতা বকে বা ধমকে করলে বা সরাসরি না বললে ওর জেদ আরও বেড়ে যাবে এবং সেটাই করতে চাইবে।
৩) বাচ্চা একটু বড় হলে টিভি, ইন্টারনেট, মোবাইল নিয়ে সে সবসময় ব্যস্ত আছে কিনা নজরে রাখা একান্ত দরকার। অত্যধিক স্ক্রীন টাইমের প্রভাব কিন্তু আচরণে পড়বেই। তাই তার টিভি দেখার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে হবে।
৪) বাচ্চারা মাঝেমধ্যে কিছু কিছু আবদার করে যার দু'-একটা মেনে নেওয়াই যায়। এতে সে খুশিমনে নিজে থেকেই সুন্দরভাবে সব কাজ করে নেবে। তবে যে কাজগুলো করা অশোভন সেগুলো অবশ্যই মেনে নেওয়া যাবে না।
৫) ছোটরা বড়দের দেখে শেখে। তাই একটি শিশুর আচরণে শৃঙ্খলাবোধ আনতে গেলে বাড়ির বড়দের আচরণও সুশৃঙ্খল হওয়া প্রয়োজন।
৬) শিশু কোনও কারণে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে গেলে বা ভীষণ জেদ দেখাতে শুরু করলে তাকে সেই জায়গা বা পরিস্থিতি থেকে সরিয়ে আনতে হবে। সেক্ষেত্রে ওর মন কোনোভাবে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে।
৭) সন্তানকে উন্নত করার আশায় অনেক সময়েই অভিভাবকরা তাকে ছোট করে অন্য বাচ্চাদের বেশি প্রশংসা করে। এটি সম্পূর্ণ ভুল পদ্ধতি। এতে বাচ্চার মধ্যে হীনমন্যতা তৈরি হয়, আত্মবিশ্বাস কমে যায়। তাই সেরকমটি না করে সন্তানের সব কাজে উৎসাহ দিতে হবে। ঠিকমতো কাজ করে নিলে তাকে পুরষ্কার দিতে হবে। এর ফলে শিশুটি উৎসাহ পাবে।
৮) শিশুরা মাঝে মাঝে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য কিংবা কোনোকিছুর বায়না করে কান্নাকাটি বা ঘ্যানঘ্যান করতে পারে। সেসময় তাকে একেবারেই গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। নয়তো তার মনে এই ধারণা তৈরি হবে যে কাঁদলেই ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ হবে। প্রয়োজনে তাকে শাসন করতে হবে, যেমন ওর সাথে কথা বলা হবে না বা খেলা হবে না। যাতে সে বুঝতে পারে, বড়দের ইচ্ছারও সম্মান করা উচিত। তবে এই শাসন এবং মারধোর বকাবকির ফারাকটা অভিভাবকদের অবশ্যই মাথায় রাখা জরুরী।
৯) বাচ্চারা রোবট নয়। এমন অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাবে যে সে অবাধ্য হচ্ছে কিংবা শৃঙ্খলা রাখছে না। তখন তাকে বকাবকি না করে বুঝিয়ে বলতে হবে। বকা দিলে বা মারধোর করলে বাচ্চারা জেদি হয়ে যায়।
একটি শিশুকে শৃঙ্খলাপরায়ণ করে তোলা নেহাতই সহজ কাজ নয়। কেউ দ্রুত সব শিখে যায়, আবার কেউ সময় নেয়। তাই ধৈর্য্য রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। পিতামাতা হিসেবে সন্তানকে আদর্শ শিক্ষা দিয়ে সুশৃঙ্খল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই হল সবচেয়ে বড় কর্তব্য। অনেক অভিভাবক শিশুকে সুশিক্ষা দিতে গিয়ে কড়া শাসন করে বসেন যেটি সম্পূর্ণভাবে ভুল। অতিরিক্ত শাসনে বাঁধতে গেলে বাচ্চার নিজস্বতা হারিয়ে যায়, শৃঙ্খলাবোধের নামে তার মনে ভীতি তৈরী হয়। তাই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই শিশুকে শৃঙ্খলা ও সহবত শেখানোর কাজে যত্নশীল হতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন