দাম্পত্য - শতাব্দী চক্রবর্তী

 

 

গোধূলি, আর একটু পরেই মিশে যাবে নিশীথের শরীরে

মেঘে ওড়া হাওয়া বেলুনের মতো শাড়ি পরে

ক্লান্ত ঘামের মুখ স্নো পাউডারে পরিচ্ছন্ন করে

ঝুরো চুল গোছা করে বেঁধে নিয়ে

পানপাতায় পাড়া ঘিয়ের কাজলে ডোবাবে আঁখিধার

শুধু দুই বক্ষে অপেক্ষা জেগে থাকবে কমলা রঙের।

 

নিশীথ, গোধূলির গা থেকে গন্ধ নেবে স্পর্শে স্পর্শে

কড়াপড়া হাতগুলো দিয়ে অতিক্রম করবে উর্বর জমি

নির্জন উপত্যকায় খানিক বাতাস নিয়ে

চৈত্রের গরম হাওয়ায় কালবৈশাখী ঝড় তুলবে

ক্লেদাক্ত শরীর তখন সেজে উঠবে আবীরে আগুনে

আমের মুকুল ধরার ঘ্রাণ উঠে আসবে

আছাড়ি পিছাড়ি স্বরলিপি ভরা গানের খাতায়।

 

এইক্ষণে বাউল মন আশ্রয় নেয় নিরহঙ্কার মুখে

বদনে আভিজাত্যের প্রয়োজন পড়ে না কখনো

প্রেম তো এমনই মাটিতে পা ফেলে হেঁটে যায় চাঁদ ছুঁয়ে

দোতারা বেজে চলে দেহ-মনের গানে লালনে লালনে।

 

উৎসবমুখর গোধূলি নিশীথে মিশে গেলে

পায়ের তাল ঠোকে, বন্দিশ আলাপ দ্রুত-আলাপ

শীতের বিকেলে ফুরিয়ে যাওয়া আলোর মতো

দপ করে নিভে যায় তেজ, শান্ত হয় নদীপথ ।

নুড়ি পাথর জলজ উদ্ভিদ ডিঙিয়ে

নিশীথের মন্ত্রবলে গোধূলি অবেণীকেশে লুটিয়ে পড়ে

আরতি শেষে চরণামৃত খেয়ে ভৈরবী সুর ধরে।

 

তখন তো সে গোধূলি নয়

সেও মিশে গেছে অনেক রাতের দানা নিয়ে

গর্ভে তার কুসুম ভোরের আলো।

কাকের দল চরকি কাটে অন্ধকার মুছে

যখন চাদর মুড়িয়ে শুয়ে থাকা গোধূলিকে

নিশীথ সোহাগ করে ডাকে "ভোরাই"

দাম্পত্য ভেসে যায় নৌকাবিহারে।

 

কোথায় তখন গোধূলি, কোথায় তখন নিশীথ!

সূর্য ছেয়ে যায় মুখের ওপর পুবের পর্দা জুড়ে

গন্ধ বয়ে আনে ভোরের হাসনুহানা, কোকিলের কুহু

আবারও কয়েক প্রহর কেটে যাবে গৃহস্থালীতে

দাম্পত্য নির্জনতায় বাঁচে, বিপ্লবে মরে যায়।

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন