বর্ষায় চুলের দুর্গন্ধ দূরীকরণ - প্রিয়দর্শিনী সমাদ্দার

 

গ্রীষ্মের পর বর্ষাকাল যে আমাদের জন্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক, এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার সঙ্গে থাকে একরকমের ভ্যাপসা গরম যার জন্য আমাদের স্ক্যাল্পে ঘাম জমে এবং বর্ষায় চুল শুকোতে দেরি হয় বলে চুলের গোড়া হয়ে থাকে ভেজা ভেজা। এর ফলে চুলে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। এছাড়া কমবেশি প্রায় সকলের স্ক্যাল্পই তৈলাক্ত হওয়ার কারণে স্ক্যাল্পে ধুলো, বালি, ময়লা জমে যার ফলস্বরূপ এই দুর্গন্ধ। অনেকসময় হরমোনের তারতম্য ঘটলেও এজাতীয় সমস্যা দেখা দেয়। তবে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব

১) পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, বর্ষার সময় আর্দ্রতার কারণে চুলের গোড়ায় তেলের সৃষ্টি হয় যার ফলে চুল ও চুলের গোড়া চিটচিটে হয়ে থাকে এবং গন্ধ হয়। এজন্য নিয়মিত চুল পরিষ্কার করতে হবে। স্ক্যাল্প অনুযায়ী উপযুক্ত শ্যাম্পু এবং হেয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করা জরুরী

২) স্নানের পর চুল ভালো করে মুছে শুকিয়ে ফেলতে হবে। বেশিক্ষণ ভেজা রাখা বা দেরিতে শুকানো হলো চুলে দুর্গন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ

 ৩) চুল ভালো করে না শুকিয়ে একেবারেই বাঁধা চলবে না। এর ফলে চুলের গোড়া ভেজা থাকায় দুর্গন্ধের সৃষ্টি হবে। চুল শুকনো থাকলেও আষ্টেপৃষ্টে করে না বাঁধাই উচিত। এতে স্ক্যাল্প ঘেমে চুলে গন্ধ হয়

৪) অধিকাংশেরই স্ক্যাল্প তৈলাক্ত হয়। সেজন্য চুলের গোড়ায় যত কম সম্ভব তেল দিতে হবে। আগের দিন রাতে তেল লাগিয়ে পরের দিন সকালে শ্যাম্পু করে ফেলা যেতে পারে। অয়েল ম্যাসাজের জন্য টি-ট্রি অয়েল সর্বাধিক উপযুক্ত। এটি একটি এসেনশিয়াল অয়েল যার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ। এই তেলটি স্ক্যাল্পে যে কোনও ধরণের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে এবং দুর্গন্ধ দূর করে। ২ টেবিল চামচ বাদাম তেলের সঙ্গে ৬ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ভাল করে মালিশ করে ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিলেই পরিষ্কার স্ক্যাল্প পাওয়া যাবে


৫) বর্ষাকালে চুল শুকোতে দেরি হয় বলে অনেকেই শ্যাম্পু করা এড়িয়ে চলেন। কিন্তু এই ঘাম-চটচটে আবহাওয়ার দরুণ বেশিদিন শ্যাম্পু না করে থাকাও মুশকিল। সেক্ষেত্রে ড্রাই শ্যাম্পু কাজে দেয়। চুলের দুর্গন্ধ দূর করার পাশাপাশি তেলতেলে ভাব কাটায়। তবে ড্রাই শ্যাম্পু হল একধরণের quick reliefএটি ব্যবহার করার দু-একদিনের মধ্যে সাধারণ শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে ফেলতে হবে

৬) বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের মিস্ট উপলব্ধ। যাঁদের মাথার ত্বক তৈলাক্ত, তাঁরা ‘ওয়াটার-বেস্‌ড’ মিস্ট ব্যবহার করতে পারেন। চুল থেকে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ বেরোলে এই মিস্ট স্প্রে করে নিলেই হবে। তবে স্ক্যাল্পের বদলে চুলের উপর স্প্রে করলে ভালো হয়। নয়তো নিয়মিত মিস্ট ব্যবহার করার কারণে স্ক্যাল্পে চুলকানির সৃষ্টি হতে পারে। আরেকটা বিষয় মনে রাখা দরকার, মিস্টে স্পিরিটজাতীয় কোনও রাসায়নিক থাকলে চুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেজন্য এই প্রসাধনীটি ব্যবহার না করতে চাইলে গোলাপ জলেই দিব্যি কাজ চলে যাবে। স্প্রে বোতলে গোলাপজল ভরে রেখে চুলে স্প্রে করে নিলেই হল

৭) চুলের দুর্গন্ধ দূর করতে এসেনশিয়াল অয়েল খুব ভালো কাজ দেয়। ১০০ মিলিলিটার জলে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার, পচৌলি, ল্যাং ল্যাং, বার্গামট, জ্যাসমিন, রোজ় পছন্দের যেকোনো এসেনশিয়াল অয়েল ভাল করে মিশিয়ে চুলে স্প্রে করে নেওয়া যেতে পারে। প্রতিবার ব্যবহারের আগে স্প্রে বোতলটি ভাল করে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে

৮) চুলের গোড়ায় ঘাম জমে গন্ধ হলে নিমযুক্ত টোনার স্ক্যাল্পে স্প্রে করা যায় বা তুলোর বলে নিয়ে সারা স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করলেও কাজ দেয়। ঘরে টোনার তৈরি করে নিতে চাইলে একমুঠো নিমপাতা ভালোভাবে সেদ্ধ করে ঠাণ্ডা করার পর একটা বোতলে ভরে নিয়ে চুলের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে। এতে স্ক্যাল্পে জীবাণু সংক্রমণের ভয় থাকবে না এবং চুলে গন্ধও হবে না

নিজেকে সুন্দর রাখার চেষ্টা তো সকলেই করে। তবে বাহ্যিক সৌন্দর্য বজায় রাখার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সুস্থতার দিকটাও খেয়াল রাখা জরুরী। শরীর ভালো রাখতে সবুজ শাকসবজির পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে জলও খেতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে ক্যাফেইন। অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে স্ক্যাল্পে ঘাম আর তেল জমতে শুরু করে। তাই মাথার দুর্গন্ধ থেকে দূরে থাকতে পানীয় জল, ডাবের জল এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে বানানো ফলের রসের উপরেই ভরসা রাখতে হবে


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন