পূণ্যতীর্থ মানে পানুদের স্কুলে আজ পুরস্কার বিতরণ উৎসব। মছিপুরের দারোগাবাবু বদ্রীবিশাল বসু প্রধান অতিথি। গোটা গ্রামের মানুষ দর্শক। কিন্তু পানুর খুব মুশকিল। পানুকে রবীন্দ্রনাথের খোকা আবৃত্তি করতে হবে। আবার দারোগাবাবুর গলায় মালা পরিয়ে বরণ করে নিতে হবে। দারোগাবাবুর কোমরে পিস্তল, বেল্ট, লম্বা-চওড়া। দেখে ভয়ই হয়।
পানু ক্লাস টু-এর ফার্স্ট বয়। কঠিন কঠিন অঙ্ক সহজে পারে। ক্রিকেট খেলায় ব্যাটে ছক্কাও মেরে পাশের বাড়ির দোতলার জানালার কাঁচও ভেঙে ফেলে। কিন্তু মাইকে, সকলের সামনে আবৃত্তি? ভারি সমস্যা।
বন্ধু সায়ন আবার ভয় দেখিয়েছে, পানু কিছু ভুল করলেই ভেঁপু
বাজিয়ে হাততালি দেবে। দাদা বলেছে, পানু, এটা স্কুলের প্রেসটিজ। সব মাটি করিস না যেন!
আজ তাই পানু নার্ভাস। বুকের মধ্যে কে যেন হাতুড়ির ঘা দিচ্ছে। অঙ্ক পরীক্ষায় এমন হয় না। কেবল মা বলেছেন আমাদের পানু ঠিক পারবে।
যথাসময়ে দারোগাবাবু এলেন। ছোট্ট পানু ডিঙি মেরে উঁচু হয়ে মালা নিয়ে দাঁড়ালো। দারোগাবাবু মাথা নিচু করে মালা পরে নিলেন। উদ্বোধনী সংগীত, হেডমাস্টার মশাইয়ের বক্তৃতা হল। পানুর নাম ঘোষণা হল।
কাঁপা পায়ে, দুরুদুরু বুকে পানু স্টেজে উঠলো।
নমস্কার! বলার পরেই পানুর মাথা হালকা হয়ে গেল। পানু চুপ। শ্রোতারাও চুপ। বিমল
স্যার ফিসফিস করে পাশ থেকে বললেন, কি হল? পানু চোখ বন্ধ করলো। মার কথা কানে ভেসে এলো, ‘আমাদের পানু
ঠিক পারবে।‘
চোখ বন্ধ করেই শুরু করলো,
“মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।“
আর ভয় করছে না। সবটা বলা হলো। কয়েক সেকেন্ড নীরবতা। তারপরই করতালিতে হল ফেটে পড়লো। সেই করতালির শব্দে পানুর হুঁস ফিরল। চোখ খুলে করজোড়ে মাথা নিচু করলো। বুকটা যেন হালকা হয়ে গেছে। দারোগাবাবু হ্যান্ডশেক করতে হাত বাড়ালেন। স্টেজ থেকে নামতেই কাকাই বুকে জাপটে ধরলো। করতালি তখনও চলছে।
বেশ ভালো
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন