মহা সিন্ধুর ওপার থেকে… ডঃ শ্রীময়ী চক্রবর্তী



কথায় বলে “truth is stranger than fiction”। বাস্তবেই বিজ্ঞানের জগতে এমন কিছু বিস্ময়কর ঘটনা রয়েছে যা হয়তো কল্প বিজ্ঞানের জগতেও কল্পনা করা সম্ভব নয়। Déjà vu ঠিক সেইরকমই একটি আপাত ‘অতিপ্রাকৃত’ ঘটনা যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈজ্ঞানিক কিছু তত্ত্ব, মনগড়া কিছু অতিরঞ্জিত কল্পনা এবং বিভ্রান্তি।  ১৮৭৬ সালে ফ্রেঞ্চ বিজ্ঞানী এমিল বৈরেক (Emile Boirac) সর্বপ্রথম Déjà vu শব্দটির উল্লেখ করেন। এই ফ্রেঞ্চ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো "already seen" অর্থাৎ যা আগে একবার প্রত্যক্ষ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি যে শুধুমাত্র Déjà vu নয়, Déjà এর আরও অনেক রকম ভেদ থাকতে পারে। অর্থাৎ শুধুমাত্র কোনো ঘটনাই নয়, কোনো শব্দ, কোনো ঘ্রাণ অথবা হঠাৎ করে আসা কোনো চিন্তাও আপনাকে আগের কোনো ঘটনার কথা অস্পষ্ট ভাবে মনে করাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,

·        déjà entendu - আগে শোনা হয়েছে (already heard)

·        déjà éprouvé - পূর্ব অভিজ্ঞতা (already experienced)

·        déjà fait - আগে সম্পাদিত কোনো কাজ (already done)

·        déjà pensé - আগে ভাবা হয়েছে এমন চিন্তা (already thought)

·        déjà senti - পূর্ব পরিচিত কোনো ঘ্রাণ বা অনুভূতি (already felt, smelt)

·        déjà su - আগে থেকে জানা (already known (intellectually))

·        déjà voulu - আগের কোনো ইচ্ছে (already desired)

·        déjà visité - আগে যাওয়া হয়েছে এমন স্থান (already visited)

 

বিভ্রান্তির সূচনাঃ 

Déjà vu এর সাথে অন্য যে বিষয়টিকে অনেক সময় এক বলে মনে করা হয় তা হল প্রিকগনেটিভ এক্সপিরিয়েন্স (precognitive experiences), অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি কোনো একটি ঘটনার সম্মুখীন হলে তার ভবিষ্যতে কী কী ঘটতে চলেছে তা অস্পষ্ট ভাবে অনুভব করতে পারেন। কিন্তু বলাই বাহুল্য, Déjà vu এবং প্রিকগনেটিভ এক্সপিরিয়েন্স এর মধ্যে সুক্ষ্ম একটি ব্যবধান আছে। প্রথমটির ক্ষেত্রে অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা সম্পর্কে আক্রান্ত ব্যক্তির মনে একটি অনুভূতি সৃষ্টি হয় এবং এই অভিজ্ঞতা বর্তমানে একইরকম কোনো ঘটনার সম্মুখীন হলে তবেই তৈরি হয়। অন্যদিকে, প্রিকগনেটিভ এক্সপিরিয়েন্স এর ক্ষেত্রে কোনো ঘটনা ঘটার আগেই অর্থাৎ ভবিষ্যত সম্পর্কে একটি ধারণার জন্ম হয়। আবার, স্কিজোফ্রেনিয়া (schizophrenia) বা হ্যালুসিনেশনের (hallucinations) এর ক্ষেত্রে false memory এর কারণে আক্রান্ত রোগী অনেক অস্বাভাবিক ঘটনা বা দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। এর সাথেও কিন্তু Déjà vu এর কোনো সম্পর্ক নেই। Déjà vu তাৎক্ষণিক এবং খুব কম সময়, মাত্র ১০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হয় না।

এই Déjà vu এর অভিজ্ঞতা সাধারণত দুরকম হতে পারে।

1.      Associative Déjà vu - সাধারণত একজন সুস্থ মানুষ বেশিরভাগ সময় যে Déjà vu এর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় তা হলো এসোসিয়েটিভ ডেজা ভ্যু (associative Déjà vu)। এই অভিজ্ঞতার ফলে কোনো একটি নির্দিষ্ট ঘটনা অথবা কোনো কথা বা কোনো গন্ধ পেলে আপনার এমন এক অনুভূতির সৃষ্টি হবে যার ফলে আপনার মনে হবে এই ঘটনা আপনার সাথে আগে কখনো ঘটেছে, বা এই কথাগুলো আপনি আগেও কোথাও শুনেছেন। গবেষকদের মতে, এই ধরনের Déjà vu মেমোরি বেসড এক্সপেরিয়েন্স (memory-based experience) অর্থাৎ স্মৃতি নির্ভর অভিজ্ঞতার প্রভাব। মানব মস্তিষ্কের যে অংশ স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে সেই অংশই এই ধরনের Déjà vu এর জন্য দায়ী।

2.      Biological Déjà vu - টেম্পোরাল লোব এপিলেপসির (Temporal lobe epilepsy) কারণে এই ধরনের Déjà vu তৈরি হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে অ্যাটাক আসার ঠিক আগের মুহূর্তে অর্থাৎ জ্ঞান হারানোর আগে তীব্র এক অনুভূতির সৃষ্টি হয় এবং তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে এই পরিস্থিতি তিনি নিশ্চিত ভাবে আগেও প্রত্যক্ষ করেছেন। টিপিক্যাল Déjà vu এর সাথে এর যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে এবং এই ধরণের Déjà vu অনেক বেশি সময় স্থায়ী হওয়ার কারণে এর সম্পর্কে গবেষণা করা তুলনামূলক ভাবে সহজ।

এছাড়াও ডিপ্রেশন, উদ্বেগ অথবা স্কিজোফ্রেনিয়ার এর মত মানসিক অসুস্থতা থাকলে Déjà vu এর অভিজ্ঞতা হতে পারে।

গল্প হলেও সত্যিঃ

এবার একটা মজার গল্প বলি। যুক্তরাজ্য অর্থাৎ ইউনাইটেড কিংডমের ৪ জন প্রবীণ নাগরিক একবার এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাঁরা কখনোই টেলিভিশনে সংবাদ চ্যানেলগুলি দেখতেন না। কারণ তাঁরা মনে করতেন যে, যেই সংবাদগুলো পরিবেশন করা হবে তা আগেই থেকে তাঁরা জানেন (যদিও তাঁরা কখনোই সঠিক ভাবে জানতেন না)। আবার তাঁরা অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছেও যেতেন না কারণ এ ক্ষেত্রেও তাঁরা মনে করতেন ডাক্তার কী পরামর্শ দিতে পারেন তা নিশ্চিত ভাবে তাদের জানা। এই ঘটনাদুটিকে ক্রনিক Déjà vu বলা হয়। চিকিৎসকদের ভাষায় এই ৪ জন প্রবীণ ব্যাক্তির মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোব নামক অঞ্চলের অস্বাভাবিকতা রয়েছে। আমরা যখন কোনো কিছু মনে করার চেষ্টা করি তখন নিউরোনের যে সার্কিট উদ্দীপ্ত হয় তা এই ৪জন ব্যাক্তির ক্ষেত্রে সবসময়ই উদ্দীপ্ত অবস্থায় রয়েছে, অর্থাৎ বলা যেতে পারে বাই ডিফল্ট তা অন পজিশনে রয়ে গিয়েছে।

Déjà vu এর কারণঃ

Déjà vu এর কারণ সম্পর্কে যা গবেষণা ইতিমধ্যে হয়েছে তাকে হিমশৈলের চূড়া বললেও অত্যুক্তি করা হবে। এতটাই অতর্কিত, তাৎক্ষণিক এবং সংক্ষিপ্ত এই অভিজ্ঞতা যে ঠিক সেই মুহুর্তে সেই ব্যক্তির ব্রেইন পর্যবেক্ষণ করা অসম্ভব। এছাড়া Déjà vu এর সাথে কোনো শারীরিক অস্বাভাবিকতাও জড়িত নেই যে তার ভিত্তিতে গবেষণা করা যেতে পারে। শুধুমাত্র মানুষের মুখে অভিজ্ঞতার কথা শুনে তার নিরিখে গবেষণা করা হয়।

বিশিষ্ট মনস্ত্বাত্বিক এবং স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞ সিগমুন্ড ফ্রয়েডের (Sigmund Freud) মতে দীর্ঘদিনের কোনো অবদমিত ইচ্ছে বা কোনো খারাপ স্মৃতি যা অন্য সাধারণ স্মৃতির মত মনে আসে না, তার থেকেই Déjà vu এর জন্ম। বিজ্ঞানীরা একে paramnesia theory নামে অভিহিত করেছেন যা বিংশ শতাব্দীতে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর পরে ক্রমে Déjà vu সম্পর্কে প্যারানর্মাল, দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন ব্যাখা বারবার উঠে এসেছে। ধীরে ধীরে Déjà vu যতটা না বৈজ্ঞানিক তার থেকে অনেক বেশি স্টিগমায় পরিণত হয়েছে।

মানব মস্তিষ্কের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল হল মেডিয়াল টেম্পোরাল লোব যা আমাদের সচেতন স্মৃতি (conscious memory) তৈরি করে। এই অংশে অবস্থিত আরও তিনটি অঞ্চল হল প্যারাহিপ্পোক্যাম্পল গাইরাস (Parahippocampal gyrus), এমিগডালা (amygdala) এবং রাইনাল কর্টেক্স ( rhinal cortex)। ১৯৭৭ সালে স্টান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডঃ গ্যাব্রিয়েলি (Dr. Gabrieli) প্রথম আবিস্কার করেন যে আমাদের হিপ্পোক্যাম্পাস (hippocampus) সচেতন ভাবে কোনো কিছু মনে করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে প্যারাহিপ্পোক্যাম্পল গাইরাস আমাদের স্মৃতির নিরিখে কোনো ঘটনা বা কোনো জিনিস আমাদের কাছে পরিচিত না অপরিচিত তা নির্ধারণ করে। বিজ্ঞানীদের মতে, মানব মস্তিষ্কের এই অংশগুলো Déjà vu এর মতন ঘটনার জন্য দায়ী।

সম্পূর্ন পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে Déjà vu সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া যেতে পারে।

১. প্রায় ৬০% মানুষের দাবী তারা Déjà vu প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এই সংখ্যাটা সর্বাধিক ১৫-২০ বছর বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ঘটনা ধীরে ধীরে কমে যায়।

২. উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ও উচ্চ আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এবং পর্যটকদের ক্ষেত্রে Déjà vu এর ঘটনা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

৩. অতিরিক্ত কল্পনাপ্রবণ মানুষ এবং যারা বহুসময় এবং বহুদিন পর্যন্ত স্বপ্ন মনে রাখতে পারেন তাদের ক্ষেত্রে Déjà vu এর ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।

৪. অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং স্ট্রেস থেকেও কিছু মানুষ যেমন Déjà vu প্রত্যক্ষ করেছেন, তেমনই রিলাক্সড এবং রিফ্রেশিং অবস্থাতেও অনেক মানুষ Déjà vu এর অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন।

৫. একটি রিপোর্ট অনুযায়ী মুক্তমনা মানুষেরা অপেক্ষাকৃত বেশি Déjà vu প্রত্যক্ষ করেন।



Déjà vu এর কারণ সম্পর্কে কিছু থিওরি বর্তমানে প্রচলিত আছে।

সেলফোন থিওরি:  ডঃ অ্যালেন ব্রাউন (Dr. Alan Brown) ডিউক ইউনিভার্সিটিতে একটি অদ্ভুত গবেষণা করেন। তিনি Déjà vu এর কারণ অনুসন্ধান করার জন্য একটি অভিনব পরীক্ষা শুরু করেন। কিছু ছাত্র ছাত্রীকে একত্র করে তিনি তাদের বিভিন্ন জায়গার কিছু ছবি দেখান এবং জিজ্ঞেস করেন যে এই ছবিগুলোর মধ্যে কোন জায়গার ছবি তাদের পরিচিত মনে হচ্ছে। এই ছবিগুলো দেখানোর আগে তাদেরকে কম্পিউটার স্ক্রিনে কিছু ছবি সাবলিমিনাল (subliminal) স্পিডে (১০-২০ মিলিসেকন্ড ব্যবধানে) দেখানো হয়, অর্থাৎ যে সময়ের মধ্যে আমাদের মস্তিষ্ক ছবিটিকে রেজিস্টার করতে পারবে কিন্তু সচেতন ভাবে লক্ষ্য করতে পারবে না। পরীক্ষার পরে দেখা গেছে, যে ছবিগুলো আগে কম্পিউটার স্ক্রীনে দেখানো হয়েছে সেই ছবিগুলোই পরে তারা বিভিন্ন ছবির মধ্যে থেকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, অর্থাৎ সেই ছবিগুলোই তাদের বেশি পরিচিত মনে হয়েছে।

পরবর্তী কালে ল্যারি জ্যাকোবি (Larry Jacobi) এবং কেভিন ওয়াইটহাউস (Kevin Whitehouse) এই  একই গবেষণা করেছিলেন কিছু শব্দ দিয়ে এবং এক্ষেত্রেও তাঁরা একই ফলাফল পেয়েছিলেন। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে এই প্রসঙ্গে। তাঁরা কয়েকজন ছাত্র ছাত্রীকে কিছু শব্দ বলেন যার মধ্যে অন্যতম হল pellow, bed, dream, blanket ইত্যাদি। পরবর্তী কালে তাদের অন্যকিছু শব্দ বলা হল যা সম্পূর্ণ আলাদা এবং জিজ্ঞেস করা হল কোন শব্দটি পূর্বে বলা শব্দগুলোর মধ্যে একটি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা sleep শব্দটিকে শনাক্ত করেছিল অথচ এই শব্দটি প্রথমে বলাই হয়নি।

অর্থাৎ এই তত্ত্ব অনুযায়ী আমরা সারাদিন আমাদের অবচেতনে বহু জিনিস দেখি, শব্দ শুনি, গন্ধ পাই এবং চারপাশে বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হই। অথচ সচেতন ভাবে আমরা কিন্তু এই ঘটনাগুলোকে লক্ষ্য করি না। পরবর্তী সময় খুব মনোযোগ সহকারে কোনো কিছু করার সময় আমাদের অবচেতনে থাকা এই ঘটনাগুলো টুকরো টুকরো ভাবে সামনে আসতে থাকে এবং আমাদের মনে হয় এই ঘটনা আগেও ঘটেছে।

হলোগ্রাম থিওরিঃ Déjà vu সম্পর্কে আরও একটি প্রচলিত তত্ত্ব হল ডাচ সাইকয়াট্রিস্ট হেরমন স্নো (Hermon Sno) প্রবর্তিত হলোগ্রাম থিওরি। এই তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষের স্মৃতি হল হলোগ্রামের মতো, অর্থাৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভগ্নাংশের নিরিখে তা একটি ত্রিমাত্রিক ছবির ধারণা তৈরি করে। বলাই বাহুল্য, ভগ্নাংশ যত ক্ষুদ্র হবে আসল ছবিটিও ততটাই অস্পষ্ট হবে। কোনো দৃশ্য, ছবি, শব্দ, গন্ধ এইগুলো আসলে আমাদের পুরনো কোনো স্মৃতির ভগ্নাংশ যা দ্বিতীয়বার আমাদের সামনে আসলে আমাদের মস্তিষ্ক তার থেকে একটি ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করার চেষ্টা করে। আর আমরা মনে করি এই ঘটনা আগেও ঘটেছে, এই গন্ধও আগেও পেয়েছি অথবা এই শব্দগুলো তো আগেও কোথাও শুনেছি।

ডুয়াল প্রসেসিং (Dual processing:delayed vision)ঃ  রবার্ট এফ্রন (Robert Efron) ১৯৬৩ সালে বোস্টনের এক হাসপাতালে একটি গবেষণা করেন। তাঁর মতে, আমাদের ব্রেইন যে ভাবে নতুন তথ্য মস্তিষ্কে স্টোর করে এবং লং টার্ম ও শর্ট টার্ম মেমোরি তৈরি করে, সেই পদ্ধতিতে কোনো রকম সমস্যা হলেই Déjà vu এর মত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের ব্রেইনের লেফট হেমিস্ফেয়ারের টেম্পোরাল লোব যখন কোনো নতুন তথ্য স্টোর করে তখন তা দুটি পথে এই টেম্পোরাল লোবে আসতে পারে। এক, সরাসরি তথ্য লেফট হেমিস্ফেয়ারের টেম্পোরাল লোবে আসতে পারে অথবা তা ডান দিকের অর্থাৎ রাইট হেমিস্ফেয়ারের টেম্পোরাল লোব মারফত তা লেফট হেমিস্ফেয়ারের টেম্পোরাল লোবে আসতে পারে। এই দুটি পথের মধ্যে কয়েক মিলি সেকেন্ডের ব্যবধান। কোনো কারণে সিঙ্ক্রোনাইজেশনের (synchronization) অভাবে এই সময়ের ব্যবধান যদি বেড়ে যায় তাহলেই Déjà vu এর মত অভিজ্ঞতা হতে পারে। তার কারণ, সরাসরি যে তথ্যটি লেফট হেমিস্ফেয়ারের টেম্পোরাল লোবে আসছে তা আমাদের ব্রেইন আগেই রেজিস্টার করে ফেলছে। ফলে পরে যখন একই তথ্য রাইট হেমিস্ফেয়ারের টেম্পোরাল লোবের মাধম্যে বামদিকে পৌঁছাচ্ছে তাকে মস্তিষ্ক পুরনো কোনো স্মৃতি বলে গণ্য করছে। এখনও পর্যন্ত সবথেকে গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব এই dual processing থিওরি।

এগুলো ছাড়াও আরও একটি তত্ত্ব রয়েছে যার মতে, আমরা শুধুমাত্র আমাদের বাস্তব জীবনই নয়, বই, সিনেমা বা অন্য কারো মুখে শোনা গল্প থেকেও বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করি। এই সব স্মৃতি মনের মধ্যে চাপা পড়ে গেলেও সম্পূর্ণ ভাবে মুছে যায় না। ভবিষ্যতে একই রকম কোনো ঘটনা ঘটলে সেই স্মৃতিগুলো অস্পষ্ট ভাবে ফিরে আসে এবং Déjà vu এর জন্ম দেয়।

শেষের কথাঃ

এত তত্ত্ব ও তথ্যের পরেও একথা নিশ্চিত যে Déjà vu সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু জানা বাকি, গবেষণার অবকাশও যথেষ্ট। শুধু পূর্বাভাস বা প্রেডিকশন এবং পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে কিছু কারণ অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়েছে মাত্র। তবে একথা অবশ্যই বলা যায় যে, Déjà vu সম্পর্কে যতই অতিপ্রাকৃতিক গল্প প্রচলিত থাকুক না কেন, শেষ কথা কিন্তু আমাদের ব্রেইন। আর হেড অফিসের অজানা গল্প জানতে একটু সময় লাগবে বই কি।

 

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন