শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার হালহদিশ - পৌষালী ব্যানার্জী


 পরিবারে নতুন সদস্যের আগমন যেমন একরাশ খুশি নিয়ে আসে, ঠিক তেমনই চারপাশ থেকে ধেয়ে আসতে থাকে নানাজনের নানান পরামর্শ। এহেন হাজারো মতামতের ঘূর্ণাবর্তে পড়ে নতুন বাবা-মা যারপরনাই হকচকিয়ে যান। একের পর এক সংশয় জাগতে থাকে মনে। তাঁদের একরত্তিটার যত্নআত্তি ঠিকমতো হচ্ছে তো! দেখভালের কোনো খামতি রয়ে যাচ্ছে না তো! এসবের সঙ্গে যুক্ত হয় ছোট্ট মানুষটার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি। সদ্যোজাত শিশুর ক্ষেত্রে তার চোখ, নাক, কান, নখ পরিষ্কার করার সময় যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন না করলে ঘটে যেতে পারে বিপত্তি। সেই ব্যাপারেই জেনে নেওয়া যাক গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা

 চোখ পরিষ্কার :

শিশুর চোখ পরিষ্কার করার সময় সাবধানতার দিকটি মাথায় রাখলেও এই কাজে তেমন ঝঞ্ঝাটের মুখে পড়তে হয় না। একটি পরিষ্কার ও নরম সুতির কাপড় বা ছোট তুলোর বল নিয়ে

ঈষদুষ্ণ গরম জলে সেটি ভেজানোর পর অতিরিক্ত জল নিংড়ে ফেলে দিতে হবে। এবার দু'চোখের কোণ থেকে শুরু করে চোখের বাইরে পর্যন্ত আলতো করে মুছে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, চোখের ভিতরে যেন কাপড় বা তুলো দিয়ে ঘষা না লাগে। দু'চোখের জন্য আলাদা আলাদা কাপড়ের টুকরো বা তুলো ব্যবহার করতে হবে

নাক পরিষ্কার :

নাক পরিষ্কারের সময় এক এক করে নাকের ছিদ্র পরিষ্কার করতে হবে। শিশুর নাকের মধ্যে মিউকাস জমে থাকলে এবং তা নিয়মিত পরিষ্কার না করলে শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষেত্রে শিশুটি অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে। একটি পাতলা তুলোর টুকরো নিয়ে সরু করে পাকিয়ে সামান্য নুন জলে বা স্যালাইন ওয়াটারে ভিজিয়ে নিতে হবে। তুলোয় যেন অতিরিক্ত জল না থাকে

এবার আলতো হাতে ধীরে ধীরে নাকের ছিদ্র পরিষ্কার করতে হবে। চোখের মতো নাকের ক্ষেত্রেও দু'টি গর্তের জন্য দুটি আলাদা আলাদা তুলো ব্যবহার করা আবশ্যক। শিশুর ঘুমন্ত অবস্থায় কিন্তু এই কাজটি করা যাবে না, নয়তো নিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসের ছন্দে ব্যঘাত ঘটায় শিশুটি ভয় পেয়ে চমকে উঠে পড়তে পারে। সেই জন্য জেগে থাকা অবস্থাতেই শিশুর নাক পরিষ্কার করা বাঞ্ছনীয়

কান পরিষ্কার :

শিশুর কান পরিষ্কারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরী কথা হলো কানের ভিতর কোনোমতেই কিছু ঢোকানো যাবে না। ইয়ার বাডস, তুলো অথবা কাপড় যাই হোক না কেন, শিশুর কানের গর্তে যেন কখনোই না ঢোকে। কান পরিষ্কার করার সময় তুলো বা পরিষ্কার নরম কাপড় ঈষদুষ্ণ জলে ভিজিয়ে অতিরিক্ত জল নিংড়ে ফেলে দিয়ে কানের লতির বাইরের অংশ এবং কানের বাইরের চারপাশ ও কানের পিছনদিকের অংশ আলতো হাতে মুছিয়ে দিতে হবে। সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করে কান পরিষ্কার করার সময় অতি যত্ন করে মুছলেও যদি শিশুটি কাঁদে, তাহলে বুঝতে হবে ওর কানে ইনফেকশন হয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে

মুখ ও দাঁত পরিষ্কার :

এই কাজটি বেশ সহজই বলা চলে। স্নান করার সময়ে অথবা একটু বড় বাচ্চার ক্ষেত্রে সে সকালে আর বিকালে ঘুম থেকে ওঠার পর তার মুখ মুছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। শিশুর মুখ পরিষ্কারের জন্য কোনরকম সাবান ব্যবহার না করাই শ্রেয়। বাচ্চার এখনও দাঁত না উঠে থাকলে একটি পরিষ্কার নরম কাপড় নিজের তর্জনীতে ভালো করে জড়িয়ে নেওয়ার পর আঙুলটি ঈষদুষ্ণ গরম জলে ভিজিয়ে বাচ্চার জিভের ওপর আলতো করে বৃত্তাকারে মালিশ করতে হবে। জিভের মাঝখানে ও পাশে এইভাবে মালিশ করার পর কাপড়টা পুনরায় ঈষদুষ্ণ জলে ডুবিয়ে গালের ভিতরের দিক ও মাড়ি একইভাবে পরিষ্কার করতে হবে। খাওয়ার পরে শিশুর জিভ পরিষ্কার করার কথা ভুলে গেলে চলবে না। শিশুর দাঁত ওঠার পর পরিষ্কার কাপড় জলে ভিজিয়ে তার দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। ফিঙ্গার টুথব্রাশও ব্যবহার করা যেতে পারে। শিশুর একবছর বয়সের পর তার জন্য কেনা যেতে পারে ইনফ্যান্ট টুথব্রাশ। বাচ্চার টুথপেস্ট নির্বাচন করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক

নখ পরিষ্কার :

শিশুর নখ নিয়মিত কাটলে নখে ময়লা জমতে পারে না কিংবা সেই নখ দিয়ে সে নিজের নাক মুখ চিরে ফেলতে পারে না। শিশুদের নিজেদের ছোট্ট ছোট্ট হাত বা আঙ্গুল মুখের মধ্যে নেওয়ার প্রবণতা থাকে। সেই কারণে নিয়মিত তাদের নখ কাটা অত্যন্ত জরুরী যাতে নখের ময়লা মুখের ভিতর না যেতে পারে। শিশুদের নখ কাটার জন্য বেবি নেল ক্লিপারস বা বাচ্চাদের স্পেশাল নেল কাটার কিনতে পাওয়া যায়। সেই দিয়েই চমৎকার নখ কাটা হয়ে যাবে। বাচ্চাদের জন্য কিন্তু বড়দের নেল কাটার কখনোই ব্যবহার করা উচিত নয়। স্নানের ঠিক পরে শিশুর নখ নরম থাকে। সেই সময় নখ কেটে ফেলা খুবই সহজ। তবে সবথেকে ভালো হয়, বাচ্চা যখন ঘুমিয়ে থাকবে। এতে বাচ্চা ছটফট করার ভয় থাকবে না এবং বাচ্চার আঘাত লাগার সম্ভাবনাও থাকবে না। তখন নিশ্চিন্তে নখ কাটা যাবে

গোপনাঙ্গ পরিষ্কার :

শিশুকন্যার ক্ষেত্রে, একটি পরিষ্কার তুলো ভিজিয়ে নিয়ে সামনে থেকে পিছনের দিকে মুছিয়ে দিতে হবে। পায়ুছিদ্র থেকে শুরু করে সামনের দিকে কোনোমতেই পরিষ্কার করা যাবে না। এতে ইনফেকশন হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। স্নান করার সময় এবং ডায়পার বদলানোর সময়েও গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করতে হবে। শিশুপুত্রর ক্ষেত্রে, স্নানের সময় তার প্রস্রাবের অঙ্গ ও সংলগ্ন জায়গা জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে দিতে হবে

 

শিশুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকটি মাথায় রেখে সবরকম সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। স্নান করানোর সময় বাচ্চার বগল, কুঁচকি ও ঘাড় ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে যাতে ওখানে ময়লা না জমে। বাচ্চার জন্য বেবি প্রোডাক্ট ব্যবহার করার সময় প্রথম দু'-তিনদিন লক্ষ্য রাখতে হবে, নতুন কিছু জিনিস মাখানোর পরে কোনও র‍্যাশ বেরোচ্ছে কিনা। বাচ্চার চোখ মুখ হাত পা পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি তার খেলনাগুলিও নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরী। কারণ বাচ্চাদের খেলনা মুখে নেওয়ার প্রবণতা থাকে। শিশুর মা-বাবা অথবা যিনি শিশুটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন তাঁর হাতে বড় নখ থাকলে চলবে না। শত সাবধানে চললেও নখের খোঁচা শিশুর লাগতেই পারে। শিশুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে অতি সহজেই এড়ানো যায় বহু রোগসংক্রমণের সম্ভাবনা




 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন