দেখতে পাচ্ছি আমার স্মৃতির
ঝুলি থেকে বৃষ্টিতে ভেজা এক কিশোরী মেয়েকে - যে কিনা বর্ষাকালের ছোট ছোট বাধা
উপক্ষা করে কখনো স্কুল বা প্রাইভেটে যাওয়াটা মিস করতোনা। বৃষ্টির রাতে
ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলেও ঠিক মোমবাতির আলোয় আলো-ছায়াকে সাথে নিয়ে পড়তে বসে যেতো -
মাঝে মাঝে বড় হওয়ার আকুলতায় নিজেকে কল্পনার জগতে নিয়ে যেতো, কখনো বা নিজের একরত্তি ছোট্ট ভাইয়ের সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠতো। এভাবে কত
বৃষ্টির মাস চলে গেছে জীবন থেকে মেয়েটির খেয়াল নেই। অনেকখানি কৈশোর কালকে পেছনে
ফেলে মেয়েটি বড় হয়েছে, মফস্বল শহর থেকে পড়তে এসেছে কলকাতার এক সুনামধন্য
কলেজে। এখানেও কতো মেঘ-বৃষ্টি-রোদের সাথে পাল্লা দিয়ে জীবনযুদ্ধে টিকিয়ে রেখেছে
নিজেকে, সময়ের পরিক্রমায় তার একটি সংসার সেজে উঠেছে এই কলকাতা
শহরেই এবং সে মেয়েটি আমি নিজেই।
কিন্তু এই সবকিছুর ভীড়ে সে
যে ফেলে এসেছিল তার শৈশব কিংবা কৈশোর কালকে যেখানে ছিল তার সারল্যতা, তার হেসে খেলে বেড়ে উঠার সময়গুলো, তার ছোট ছোট পাওয়া - না
পাওয়া নিয়ে কতই না অভিযোগ কিংবা তার বাল্যবন্ধুরা
যাদের সাথে শত শত স্মৃতির রোমান্থন কিংবা বৃষ্টিতে স্কুল ছুটির দিনে পাড়ার সব
বাচ্চারা মিলে ভিজে ভিজে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানো বা বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে
রান্নাবাটি খেলার দিনগুলি কিংবা প্রচন্ড বৃষ্টিতে রঙ তুলি নিয়ে কাগজে কলমে বর্ষাকে
রূপদান করার চেস্টা। সেই দিনগুলো কি ফিরে পাওয়া যাবে কখনো?? কখনো যাবেনা হয়তো।
এই যে এখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির
মধ্যে এত এত স্মৃতির ভীড় জমেছে তাতেই কি-বা পুরনো দিনে ফিরে যাওয়া যায়? বা এসব অমূল্য দিনের মূল্যহীন স্মৃতিগুলো কারো সাথে শেয়ার করলেই কিছুটা হালকা
লাগবে নিজেকে, নাকি আরোও মন ভারী হয়ে উঠবে? চাইলেই কি নিজের চিরপরিচিত গ্রামে ছুটে যাওয়া যাবে এমন এক বৃষ্টির দিনে? এসবই ভাবছি, ভাবতে ভাবতে এতটাই গভীরতায় চলে গেছিলাম যে খেয়ালই
করিনি কলিংবেলটা কয়েকবার বেজে উঠেছিল, আরেকবার কানে আসতেই
তাড়াহুড়ো করে গেট খুলতেই সে তার চিরাচরিত মিষ্টি গলায় বলে উঠলো - " কিরে
এতক্ষণ দরজা খুলতে টাইম লাগে, কি করছিলিস তুই?" মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে উঠলাম - "বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি তাইনা, ভিজবে আমার সাথে??" কর্মব্যস্ততাময় একটি
দিনশেষে আমার কথার সাথে নিজেকে রিলেট করতে না পেরে একটু অবাক হয়ে বলে উঠলো আজকাল
নাকি বড্ড ভুলভাল বকতে শুরু করেছি। সত্যিই তো কৈশোরের বর্ষাকে দরজার ভেতরে নিয়ে
আসতে চাইলেই কি আর নিয়ে আসা যায়?? যায়না, সে যে শুধুই স্মৃতি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন