জনমনিষ্যিহীন
শুনশান রাস্তা। এত রাত্তিরে আর কেই বা জেগে বসে থাকবে! লেট নাইট পার্টি সেরে
ফিরছিল শৌনক। আজ নেশাটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছে। গাড়ির ভেতরের নীল আলোয় চোখটা
যেন জুড়ে আসছিল। মিউজিকটা আরো একটু বাড়িয়ে দিল সে। বাড়ি পৌঁছতে এখনও মিনিট
কুড়ি। সামনের ফ্লাইওভারটা ক্রস করতেই সামনে এসে দাঁড়াল একজন পূর্ণবতী মহিলা। হাত
দেখিয়ে গাড়ি থামাতে ইঙ্গিত করছে সে। আলুথালু পোষাকে বিধ্বস্ত চেহারা একেবারে।
কারখানা থেকে এইমাত্র স্বামীর অ্যাক্সিডেন্টের খবরটা এসেছে! বাড়িতে আর কেউ নেই।
অসহায় মহিলাকে গাড়িতে তুলে নিল শৌনক।
চিন্তায় পড়লেন ট্রাফিক সার্জেন্ট জয়ন্ত বিশ্বাস।
- স্যর পেট্রোলিং বাড়িয়ে দিলে হয় না! অবশ্য বাড়িয়ে যে
দেব তেমন ম্যানপাওয়ারই বা আছে কই! আপনি বরং উপর মহলে একটু আপিল করুন স্যর। যদি
কিছু লোকজন দেয়।
সহায়ক গৌরাঙ্গ মুখার্জীর কথায় চিন্তার মেঘ এতটুকুও কাটল
না। মিঃ বিশ্বাস যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই রইলেন।
- সিসিটিভি-ই যেখানে কায়দা করতে পারছে না সেখানে মানুষে কিছু করতে পারবে বলে মনে হয়, মুখার্জী! তাছাড়া প্রতিটা অ্যাক্সিডেন্টের মধ্যে সময় ব্যবধানেও তো কোনও সামঞ্জস্য নেই। কতদিন ধরে এইভাবে নজর রাখা যাবে!
- স্যর ভুতুড়ে কেস নয় তো! ঢোঁক গিলে বলল গৌরাঙ্গ।
- আজকাল খুব হরর্ মুভি দেখছ মনে হচ্ছে! নাকি লুকিয়ে গাঁজার নেশা ধরেছ? মাথা নিচু করে নেয় সে। আর কথা বাড়ায় না।
বছর কয়েক আগে এমনই কোনও রাতে চরম বিপদে পড়ে সাহায্যের জন্য রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছিল সুনয়না। ব্রিজের মুখে একটা গাড়ি পেয়ে অতশত না ভেবে উঠে পড়েছিল সে। কিন্তু অ্যাক্সিডেন্টের খবর পেয়েও সেদিন সে স্বামীর কাছে পৌঁছতে পারেনি। পরদিন সকালে রাস্তার ধারে তার ভোগ করা নিথর শরীরটা আবিষ্কার হয়েছিল।
আলুথালু কাপড়ের ফাঁকে মহিলার বক্ষ বিভাজিকা স্পষ্ট। আলতো করে তার হাতে হাত রাখল শৌনক। সঙ্গে সঙ্গে চামসা একটা গন্ধে গা গুলিয়ে উঠল তার। পাশের মহিলা তখন ঘুরে তাকিয়েছে। কিন্তু কোথায় মহিলা! তার পাশের সীটে বসে রয়েছে বীভৎস একটা মূর্তি। পচা চামড়াগুলো খসে খসে পড়ছে গা থেকে। চোখের কোটরে কোনও মণি নেই। একটা পৈশাচিক শব্দে হাঁ করে সে যেন গিলে ফেলতে এল তাকে। তৎক্ষণাৎ গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল শৌনক। তারপর ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে প্রচণ্ড একটা শব্দ...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন