- মালতী চার-পিস বেগুন ভাজা আর খান কতক লুচি করে দিয়ে যা তো... একেই রবিবার আরো চার বাড়ি কাজ পড়ে রয়েচে আর কাজ সেরে ঠিক বেরিয়ে যাবার সময় অর্ডার বুড়ির,আজ ওনার লুচি আর বেগুন ভাজা খাবার ইচ্চে হয়েছে যে... আর হল হল ঠিক কাজ সেরে বেরুবার সময়ে...
- ওরে ও মালতী! সাদা তেলে বেগুন ভাজবি আর নুন হলুদের সাথে দু চার দানা চিনি মাখিয়ে নিস্।
- আচ্চা মা আচ্চা।
গ্যাসের উপর বসানো কড়াই তেতে উঠে ধোঁয়া বেরোচ্ছে তাতে নুন হলুদ আর চিনি মাখানো বেগুনগুলো ছেড়ে দিতেই তেলে চড়চড় শব্দ করে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। এখন মালতীর মাথার ভেতরটা এমন জ্বলছে। কতগুলো বাড়ি কাজ বাকি এখনও। তারপর রেশন তোলা। নিজের বাড়িতে গিয়ে রান্নাও তো করতে হবে। এদিকে কোমরের ব্যথাটা ওকে ভোগাচ্ছে কদিন ধরেই।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মালতী নুন, চিনি, সাদাতেল দিয়ে ময়দা মাখতে শুরু করলো লুচির জন্যে।
মালতী চেঁচিয়ে বলে, আচ্চা।
নেহাত ছেলে বউ বিদেশে থাকে বুড়ি একা এখানে। আর মনটা খুব দয়ালু তাই মায়া পড়ে গেছে মালতীর, নইলে যে কটা পয়সা মাস গেলে মাইনে দেয় কিপটে বুড়ি তাতে ওর পোষায় না। তবে টিফিনটা খুব ভালো দেয়। এই যা। আর মানুষটা যে বড্ড ভাল। তাড়াতাড়ি ফুলকো ফুলকো লুচি আর বেগুন ভাজা প্লেটে সাজিয়ে মালতী পা বাড়ায় বুড়ির ঘরের দিকে।
সাদা সোনালী পাড়ের থান পরে বৃদ্ধা সবে পুজো সেরে বারান্দার তুলসী গাছে জল দিচ্ছেন পেতলের ঘটি হাতে, সাক্ষাৎ দেবী যেন।
এমনি সময়ে মালতী বলে উঠল, গরম গরম লুচি বেগুন ভাজা খেয়ে নিও। টেবিলের উপর রেকে যাচ্চি। আমার আজ বড় তাড়া, রবিবার আজ। কাজ ক'টা সেরে রেশনের জন্যে লাইন দিতে হবে গো আজ। কেরোসিন না পেলে ঘরে যে হাঁড়ি চড়বে না।
- কোথাও যাবি না। বসে থাক আসছি আমি।
- উফ ... আচ্ছা জ্বালা তো ...
- এনে ধর। চোখ খুলতেই দেখে লুচি আর বেগুন ভাজা কখন রান্নাঘর থেকে থালা সাজিয়ে ওর জন্যে এনেছে।
- নে নে খেয়ে নে। তারপর দূর হ। আর এই নে, কাল এই মশারিটা তোরঙ্গ থেকে বের করে রেখেছি তোর জন্যে। নিয়ে যাস।
- চোখ জলে ভরে যায় ওর। তার জন্যে কেউ ভাবে এমনি করে!! খুব ছোটো বেলায় মাকে হারিয়েছে, মায়ের মুখটাও ঠিক করে মনে নেই ওর। মা কি এমনই হয়! বড্ড নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয় এখন।
মোটা সাদা রজনীগন্ধার মালা ছবিতে। বুড়ি হাসছে ঠিক যেমন খুশি হলে মালতীর দিকে তাকিয়ে হাসতো। ধূপের গন্ধে ঘরের বাতাস ভারী। সামান্য কিছু আত্মীয়স্বজন ঘরের মধ্যে। বুড়ির একমাত্র ছেলে এসেছে বিদেশ থেকে। যাকে দেখার আশায় বুড়ি চোখের জল ফেলত বসে বসে।
বুড়ির শোকসভা বসেছে। বড় লোকদের ব্যাপার স্যাপার। হঠাৎ হপ্তা দুয়েক আগে মালতীই তো সকালে কাজে এসে ডেকে ডেকে সাড়া না পেয়ে আবিষ্কার করেছিল বিছানায় পরম নিশ্চিন্তে চিরঘুমে শায়িত তার প্রিয় মানুষটি। কেঁদে কেঁদে আশেপাশের মানুষজন ডেকেছিল। তার কপাল যে চিরকাল পোড়া, সুখ সয় নাকি!
কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়েছিল। এত কষ্ট তো তার নিজের বরটা যকন মরে তকোনও হয়
নি। আসলে বরটা তো তাকে বউ বলে ভাবেই নি কোনোদিন। মদ খেয়ে এসে যা করতো ওর সাতে আর তকনকার কষ্টের কতা শোনার
তো এই বুড়িই ছিল... ডুকরে কেঁদে ওঠে মালতী।
একন নিজের সুক দুঃখুর কতা কাকে বলবে ও... !!
সকলেই ফিরে তাকায় ওর দিকে। বুড়ির ছেলে এগিয়ে আসে ওর দিকে। মায়ের মুকখানি এক্কেরে কেটে বসানো।
- মালতীদি তুমি আমার সাথে কাল সকালে একবার দেখা কোরো।
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে মালতী। বড্ড শীত করছে আজ। জ্বর আসছে কী? ছেলের থেকে বিদায় নেবার অনুমতি চায়। নিত্যদিনের সুক-দুঃকের কথা হতো যে মানুষটার সাতে তার ছবি দেকতে যে পরানটা ফেটে যাচ্ছে।
চলে যাবার সময়ে ছেলেটি তাকে ডেকে আবার বলল, দিদি, মা তোমাকে কিছু টাকাপয়সা আর বাড়ির পেছন দিকের কেয়ারটেকার থাকার ঘরটা উইল করে দিয়ে গেছে তুমি এসে তোমার প্রাপ্য বুঝে নিও। আমি পরশু ফিরে যাচ্ছি বিদেশে। ঠিক ভোর পাঁচটাতে ফ্লাইট।
অবাক হয়ে যায় মালতী! যাকে কিপটে বুড়ি বলে ভেবে এসেছে সে কিনা তার জন্যে ...!!
গলা বুজে আসে কান্না বুকের ভেতর থেকে ঠেলে বেরোচ্ছে মনে হয়। এত অভাগী সে যে মরার সময়ে এমন দেবীর পাশে থেকে শেষ জলটা এগিয়ে দিতে পারলো না। বড্ড আফসোস হয়... বড্ড...
গল্পের প্রথমাংশ আগেই অনুমান করতে পারছিলাম। তাই চমকিত হয়নি। তবে উপস্থাপনা খুব সুন্দর আর দ্বিতীয়ভাগটা খানিক সাঁঝবাতি ছবির মতো লাগল। সব মিলিয়ে বেশ লাগল।
উত্তরমুছুনবেশ গল্পটির বাঁধন। মালকিনের সঙ্গে কাজের মেয়ের স্বাভাবিক সম্পর্কের বাইরেও যে মানবিকতা থাকে যেটা এই গল্পের বার্তা এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তে গল্পটি নির্মিত।আমার ভালো লেগেছে অন্যদের ও ভালো লাগবে। ধন্যবাদ গল্পকারকে।
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন