রেসের ঘোড়া - শক্তি পুরকাইত

আগের মত আতাউল মোল্লার শরীরটাও ভাল নেই। সেই আগের মত ঘোড়দৌড়ের কেরামতি তেমন দেখাতেও পারে না। তবুও প্রতিবছর ডাক পড়ে তার, মিলনীপুর ছাউনির মাঠে ঈদের মেলাতে। আতাউল মানে দর্শকদের উল্লাস। ছেলে-মেয়েরা ওই একটা দিন অপেক্ষা করে থাকে তার খেলা দেখবে বলে। ঈদ কমিটির উদ্যোক্তাদের বিশেষ অনুরোধে আবার সে ঘোড়দৌড়ে অংশ নেবে। তাই সকাল থেকে ঘোড়াকে পরিচর্যাতে ব্যস্ত। ঘোড়াকে স্নান করানো, ঘোড়ার গা মুছিয়ে দেওয়া। তারপর ভিণ গাঁ পেরিয়ে প্রতিযোগীতার মাঠে পৌঁছানো। আতাউলের আজ সব কিছু স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। এর আগে কোনদিনও ঘটেনি। বুড়ো বয়সে সে কী আগের মত প্রথম হতে পারবে। প্রথম হলেই নগদ কুড়ি হাজার টাকা মিলবে। আল্লার কাছে সে কসম করে, হাসপাতালে ভর্তি ছেলেটাকে যেন সুস্থ করতে পারে। ঘোড়া নিয়ে মিলনীপুর ছাউনির মাঠে এসে দাঁড়ায়। সকালের রোদে সাদা ঘোড়ার গা থেকে যেন রুপোর ঝালরের মত চক চক করছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস এবছরও পুরস্কার সে নেবেই। খেলার মাঠে যে যার ঘোড়া নিয়ে দাঁড়ায়। আতাউল ঘোড়দৌড়ের জন্যে প্রস্তুত হয়।

বাঁশি বেজে ওঠে। বাঁশির শব্দ তার বুকের ভিতর কনকন করে ওঠে। একে একে ঘোড়া ছুটেছে, তীর বেগে। আতাউল সবার আগে আগে ছুটেছে।

সে দেখতে পেল ধুলোর মত কি যেন সামনে দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। আতাউল কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। ঘোড়া পা দুটো মুড়ে ধীরে ধীরে বসে পড়ল। মাঠের দর্শকের চিৎকার ভেসে আসছে। এতক্ষণ সে বুঝতে পারল আর কোনদিনও প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে পারবে না। ঈদ কমিটির লোকেরা ছুটে গিয়ে ঘোড়ার মুখে জল দিল। ঘোড়ার ঘোলাটে চোখ তাকিয়ে থাকল খোলা আকাশের দিকে। মুহুর্তে শেষ নিশ্বাস পড়ল মাটিতে। আতাউল চিৎকার করে উঠল, “রু-ক-সা -না! তুই চলে গেলি! আমি রেসের মাঠে কাকে নিয়ে ছুটব?”

দূরে আতাউল শুনতে পেল, একমাত্র ছেলের কন্ঠস্বর, “আব্বা আমি আগের মত হাঁটতে পারব তো? আগের মত রেসের মাঠে ছুটবো...!” তার দু’চোখ বেয়ে নেমে এল জল নয়, শেষ বিজয়ের অকৃত্রিম ইচ্ছা!






1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন