জ্যোতিষী - আনন্দ গোপাল গরাই


সকাল থেকেই ভাগ্য গণনার জন্যে লাইন পড়ে গেছে জ্যোতিষাচার্য্য রাধাবল্লভ শাস্ত্রীর দুমকা শহরের জ্যোতিষ গণনা কেন্দ্রে। সপ্তাহে তিনদিন এখানে বসেন শাস্ত্রীজী। দুদিন নিজের বাড়িতে, দুদিন অন্য এক শহরে। লোকে বলাবলি করে শাস্ত্রীজীর গণনা নাকি অব্যর্থ। কেউ আসছে চাকরি হচ্ছে না কেন দেখাতে, কেউ আসছে মেয়ের উপযুক্ত পাত্র মিলছে না কেন জানতে, আবার কেউ বা আসছে ছেলের বৌ করার জন্যে একটা মেয়ে জুটছে না কেন তার কারণ খোঁজার জন্যে। আজকাল নাকি মেয়েদের বড় আকাল পড়েছে। ছেলের বিয়ে দিতে চাইলেও উপযুক্ত মেয়ে মিলছে না। বেকার হলে তো কথাই নেই!

সকাল সকাল গণনাকেন্দ্র খুলে নাম নথিভুক্ত করে যাদব নামে একটা ছেলে। নাম লেখা শুরু হয় সকাল সাতটা থেকে। পুজোআচ্চা সেরে শাস্ত্রীমশাই আসেন ঠিক নটায়। শুরু হয় হস্তরেখা বিচার ও ভাগ্য গণনার জটিল প্রক্রিয়া।

সেদিন ছিল পঁচিশে ভাদ্র। সকাল থেকেই যথারীতি মানুষের ভিড়। প্রথমেই ডাক পড়লো মনোরঞ্জন ভদ্র বলে এক ভদ্রলোকের। দুবছর থেকে মেয়ের জন্যে পাত্র খুঁজছেন। কিন্তু মেয়ের রঙ পরিষ্কার নয় বলে ভালো ছেলে পাচ্ছেন না।

জ্যোতিষীমশাই মোটা টাকার বিনিময়ে কবচের ব্যবস্থা করে দিলেন এবং অচিরেই সুপাত্র পাওয়া যাবে বলে আশ্বাস দিলেন।

এবার ডাক পড়ল দ্বিতীয় জনের। চাকরি না জোটার জন্যে শনির দশাকেই দায়ী করলেন উনি এবং স্টোন ধারণের পরামর্শ দিয়ে সহকারীর কাছে পাঠিয়ে দিলেন তাকে। তৃতীয় জনের হস্তরেখা বিচার করতে যাবেন এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে এক ভদ্রলোক এসে শাস্ত্রীমশাইকে বললেন, “তাড়াতাড়ি বাড়ি চলো দাদা। সর্বনাশ হয়ে গেছে। তোমার মেয়ে সুলেখা পাড়ার বখাটে ছেলে হাবলুর সঙ্গে পালিয়ে গেছে।”

জ্যোতিষীমশাই হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন ভদ্রলোকের দিকে। উপস্থিত সকলেই একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো।


1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন