আপাতদৃষ্টিতে প্রশ্নটিকে পাগলের প্রলাপ মনে হওয়া
নিতান্ত অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু এটা
অস্বীকার করা যায় না যে প্রশ্নটির মধ্যে এমন কিছু নেই যা যুক্তিবিরোধ দোষে দুষ্ট। সেক্ষেত্রে জোর দিয়ে
বলা চলে না যে এমনটা হওয়া অসম্ভব। আর পাঠক যদি চলচ্চিত্রপ্রেমী হয়ে থাকেন তবে মনে করিয়ে
দিই যে “দ্য মেট্রিক্স”,“শাটার
আইল্যান্ড”,“দ্য ট্রুম্যান শো”,“মেমেন্টো”র মতো চলচ্চিত্রগুলি অথবা প্রাচ্যের
দিকে তাকালে “ফরগটেন”এর মতো গায়ে-কাঁটা-দেওয়া কোরিয়ান মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার
ছবিগুলি কিন্তু দার্শনিক সংশয়ের এই জিজ্ঞাসার উপরেই তৈরি – আমার চেনাজানা দুনিয়াটা
কি আসলেই সত্যি? নাকি তা আমার মনের
ভুল বা কারো শয়তানী?
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অবশ্য আমার উদ্দেশ্য নয়
এখানে; বরং আমি পাঠককে নিয়ে যেতে
চাই অতীতে। আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর পূর্বের অতীতে। কারণ দার্শনিক সংশয়
দেকার্তকে দিয়ে শুরু হয়নি, তা
দর্শনের আদিকাল থেকেই বর্তমান।
প্রাচীন গ্রীক দর্শনের চারটি মূল সম্প্রদায়ের একটিই হচ্ছে
সংশয়বাদ, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন
পিরহো (Pyrrho)| কিন্তু এটাও পুরো
গল্প নয়। কারণ সংশয়বাদ কেবলমাত্র প্রতীচ্য দর্শনের বৈশিষ্ট্য নয়। ভারতীয় দর্শনের
পরিসরেও সংশয়বাদের উল্লেখ পাওয়া যায় চার্বাক দর্শনের প্রসঙ্গে। নাস্তিক হিসেবে
কুখ্যাত চার্বাকরা এমনিতেই প্রত্যক্ষ ছাড়া অন্য কোন প্রমাণ গ্রহণ করতে চাইতেন না
(পরবর্তীকালে অবশ্য অনুমানকেও প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে স্বীকৃত হন চার্বাকরা), কিন্তু সংশয়বাদী চার্বাক সম্প্রদায়
প্রত্যক্ষকেও মানতে চাননি। যাই হোক, এই আলোচনা
চার্বাকদের সম্পর্কে নয়। চার্বাক ব্যতীত আরও যে একটি দার্শনিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সংশয়ের নিদর্শন
পাওয়া যায় এবং যার বক্তব্য চার্বাকদের মতই বিতর্কিত তা হল বৌদ্ধদর্শনের মাধ্যমক
সম্প্রদায়, যার প্রতিষ্ঠা করেন
নাগার্জুন।
বৌদ্ধ দর্শনে সংশয়বাদের ধারণা আছে এটা জেনে
সম্ভবত অধিকাংশ পাঠকই অবাক হচ্ছেন, কিন্তু
এখানেই শেষ নয়। ২০২১ সালে ‘International Journal for the Study
of Skepticism’ জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ “The Madhyamaka
Contribution to Skepticism”এ উঠে এসেছে আরেকটি চাঞ্চল্যকর
তথ্য – গ্রীক দর্শনে সংশয়বাদের জনক পিরহো সম্ভবত ভারতীয় দার্শনিকদের সাথে আলোচনার
মাধ্যমেই তার নিজস্ব সংশয়বাদী ধারার প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন। যদিও নিশ্চিতভাবেই
এরকম নিদর্শন আরও পাওয়া যাবে, এর
থেকে এই ধারণাই দৃঢ় হয় যে প্রাচ্য ও প্রতীচ্য দর্শন দুটো স্বতন্ত্র চিন্তাধারা নয়, তারা একে-অপরকে প্রভাবিত করে এসেছে সেই আদিকাল
থেকে|
শূন্য
থেকে শুরু
সংশয়বাদ নিয়ে পরবর্তী আলোচনায় যাওয়ার আগে
মাধ্যমক দর্শন সম্পর্কে পাঠককে কিছুটা ধারণা দেওয়া সমীচীন,
যদিও এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ নেই এবং
সৌভাগ্যবশতঃ তার প্রয়োজনও হয়তো পড়বে
না (তবে পাঠক এবিষয়ে সহজপাঠ্য কোন বইয়ে আগ্রহী থাকলে Jan
Westerhoff-এর “Nagarjuna’s
Madhyamaka: A Philosophical Introduction” পড়তে পারেন)|
যাই হোক, খুব সংক্ষেপে বলা হলে মাধ্যমক দর্শনের মূল ধারণা হল কোন বস্তু বা
প্রপঞ্চের অন্তর্নিহিত প্রকৃতি বা “স্বভাব” বলে কিছু থাকে না। “স্বভাব”
থাকা কী বোঝায়? স্বভাব থাকার অর্থ
হল –
1.
বস্তুটি সরলতর অংশ দ্বারা গঠিত নয় (বস্তুটি অগঠিত)।
2.
বস্তুটির অস্তিত্ব কোন পূর্ব কারণের উপর নির্ভরশীল নয়।
3.
বস্তুটির অস্তিত্ব কোন ধারণার উপর নির্ভরশীল নয়।
একটা উদাহরণের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করা যাক –
ধরা যাক একটা চায়ের পেয়ালার কথা। এই পেয়ালাটা তার উপাদানের (সেরামিক, মাটি, কাঁচ যাই হোক) অসংখ্য পরমাণুর সমষ্টি, অতএব তা গঠিত। এই উপাদানকে কাজে লাগিয়ে কারখানায় পেয়ালাটিকে তৈরি করা হয়েছে, অতএব তার অস্তিত্বের কারণ রয়েছে (কারখানার
শ্রমিকরা)। কিন্তু এসবের চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ যেটা তা হল “পেয়ালা” একটা ধারণাগত গঠন। সেরামিক, মাটি, বা কাঁচের একটি বিশেষ
আকৃতির একটা নামকরণ মাত্র। এর বাইরে সেই আকৃতিটির মধ্যে কোন অন্তর্নিহিত “পেয়ালাত্ব” নেই। আর এই “পেয়ালাত্ব”
না থাকার অর্থ পেয়ালাটি স্বভাবশূন্য। একই বিশ্লেষণ পেয়ালাটির উপাদানসমূহের জন্যও প্রযোজ্য
এবং মাধ্যমকদের বক্তব্য অনুযায়ী সবকিছুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য |
বেশ, মানলাম নাহয় যে সবকিছুই স্বভাবশূন্য। কিন্তু এই যে স্বভাবশূন্যতার
কথা বলছি, এই স্বভাবশূন্যতাই কি তবে
সবকিছুর প্রকৃত স্বভাব? জাগতিক
সত্যের প্রকৃত রূপ? কিন্তু তাই হলে
স্বভাবহীনতাকেও একপ্রকার “স্বভাব” বলে চিহ্নিত করতে হয়! তাতে কি নাগার্জুনের
অবস্থান স্ববিরোধী হয়ে যায় না?
নাগার্জুনের সাথে তর্করত প্রতিপক্ষ যখন এই একই
অভিযোগ তোলেন তার উত্তরে নাগার্জুনের প্রতিযুক্তি একদিকে যেমন বিতর্কিত তেমনই
অন্যদিকে প্রাচীন অর্থাৎ ধ্রুপদী সংশয়বাদকে বুঝতে ভীষণরকমের প্রাসঙ্গিক।
নাগার্জুন তাঁর প্রতিপক্ষের অভিযোগের উত্তরে
বলেন যে তাঁর স্বভাবহীনতার অবস্থান স্ববিরোধের সৃষ্টি করে না কারণ আসলে তাঁর কোন
অবস্থানই নেই!
বিভিন্ন ভাষ্যকাররা নাগার্জুনের এই উত্তরের
বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন; তাদের
মধ্যে সংশয়বাদী চিন্তার সাথে খাপ খায় যে ব্যখ্যাটি সেটি হল এইরকম – নাগার্জুনের
শূন্যবাদী দর্শনের উদ্দেশ্য কোন দৃষ্টিভঙ্গী বা অবস্থানকে প্রতিষ্ঠা করা নয়, বরং সমস্ত দার্শনিক অবস্থানের অসারতা প্রমাণ
করা, যার অর্থ শূন্যবাদ নিজেও কোন
অবস্থান হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
কারণ যে কোন দার্শনিক অবস্থান গ্রহণের অর্থই হল অবিদ্যার (ignorance) বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। তাই নাগার্জুনের
প্রতিপক্ষের অবস্থান যেমন অস্বীকার্য, স্বভাবশূন্যতাও অবস্থান হিসেবে তেমনই অস্বীকার্য। বরং সকলপ্রকার অবস্থান বা
দৃষ্টিভঙ্গী পরিত্যাগই অবিদ্যার বন্ধন তথা দুঃখ থেকে মুক্তিলাভের একমাত্র উপায় |
সংশয়
নিয়ে সংশয়
নাগার্জুনের উত্তরের এই ব্যাখ্যাকে আমরা
সংশয়বাদী ব্যাখ্যা বলেছি। তবে বিভ্রান্তি এড়াতে একে “ধ্রুপদী সংশয়বাদ” বলাটাই শ্রেয় (কিংবা গ্রীক
দর্শনের পরিসরে আমরা যাকে “পিরহোনীয় সংশয়বাদ” বলব)। কারণ পাঠককে মনে করিয়ে দিই
যে আমরা আলোচনার শুরুটা করেছিলাম দেকার্তের সংশয় দিয়ে, যার সাথে আমরা অধিক পরিচিত। কিন্তু নাগার্জুন বা পিরহোর সংশয়বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন
প্রকৃতির এক চিন্তাধারা, যার কোন
রেশ দেকার্তের সংশয়বাদে পাওয়া যায় না। সংক্ষেপে বললে, দুটোর মধ্যে পার্থক্য হল দেকার্তের কাছে সংশয় একটা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সংশয়াতীত জ্ঞানে উপনীত হওয়াই তাঁর
উদ্দেশ্য। এই অর্থে দেকার্ত সংশয়বাদীই নন। উল্টোদিকে নাগার্জুন তথা পিরহোর সংশয়বাদের লক্ষ্য হল
সকলপ্রকারের চরম অবস্থানের অসারতা প্রদর্শন করে অবস্থানহীনতাকেই গ্রহণ করা। ঠিক কী অর্থ এর?
নাগার্জুন ও পিরহো
ধরা যাক একজন কট্টর আস্তিক ও কাঠ নাস্তিকের
মধ্যে তুমুল তর্ক চলছে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে নাকি নেই তাই নিয়ে। একজন মাধ্যমক বা
পিরহোনীয় সংশয়বাদী এদের মাঝে পড়লে কি করবেন? তিনি যুক্তি দেবেন যে আস্তিক ও নাস্তিক উভয়েই ঈশ্বরের একটা নির্দিষ্ট
ধারণাকে সম্বল করে তাঁদের যুক্তি ও প্রতিযুক্তি খাড়া করছে,
কিন্তু সেই ধারণাই আদৌ সঠিক কিনা বা তার মাধ্যমে ঈশ্বরকে আদৌ
জানা সম্ভব কিনা তা ভেবে দেখছে না। আবার ধারণার সঠিকতা পরীক্ষা করতে হলে ঈশ্বরের
ধারণা-নিরপেক্ষ জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। যদি সেই জ্ঞান লাভ করা সম্ভবও হয়, তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য হবে না (যেহেতু ভাষায়
প্রকাশ করলেই তা আর ধারণা-নিরপেক্ষ থাকবে না)| অতএব, ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে
না নেই এই তর্কই সম্পূর্ণ অসার হয়ে যায়।
উপরোক্ত উদাহরণে যদিও কোন বিশেষত্ব নেই তবু একটা
প্রশ্ন এখানে উঠতেই পারে – সংশয়বাদীর পক্ষে যে কোন দ্বন্দ্বেই দুটি বিপরীত
দৃষ্টিভঙ্গির অসারতা প্রমাণ করা সম্ভব হবে তার নিশ্চয়তা কোথায়? খেয়াল রাখতে হবে যে সে কেবল “এই দৃষ্টিও সঠিক
হতে পারে, ওই দৃষ্টিও সঠিক হতে
পারে” এমনটা বলে মধ্যস্থতা করতে চাইছে না; বরং তাঁর উদ্দেশ্য হল যে কোন চূড়ান্ত দৃষ্টিভঙ্গির অসারতা দেখানো। কিন্তু এই প্রশ্নের
উত্তর আসলে উপরের উদাহরণেই রয়েছে – একজন সংশয়বাদীর (এখন থেকে “সংশয়বাদী” অর্থে
আমরা মাধ্যমক বা পিরহোনীয় সংশয়বাদীই বুঝব) মূল বক্তব্যই হল এই যে যা কিছু ধারণার
মাধ্যমে আমরা বাহ্যিক জগৎকে জানি তাদের কোন ধারণা-নিরপেক্ষ ভিত্তি দেওয়া সম্ভব নয়, আর তার ফলে এই ধারণাগুলির কোনরকম ভিত্তিই থাকা
সম্ভব নয়। গ্রীক সংশয়বাদী সেক্সটাস এমপিরিকাস (Sextus
Empiricus)এই সমস্যাকে “the problem
of the criterion” হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি যুক্তি দেন যে কোন
ধারণার সঠিকতা যাচাই করতে হলে একটা মানদণ্ড (criterion)-এর প্রয়োজন হয়, কিন্তু আবার এই মানদন্ডের যথার্থতা যাচাই করতেও
আরেকটি মানদন্ডের প্রয়োজন হয়। একই যুক্তিতে সেই মানদন্ডের যথার্থতা বিচার করতে অপর আরেকটি মানদন্ড
প্রয়োজন হয়, ইত্যাদি। দেখা যাচ্ছে এই
যুক্তিতে হয় অনবস্থাদোষ (infinite regress) সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ ক্রমাগত
একটার পর একটা মানদন্ডের দরকার হয়, নয়তো
চক্রাকার যুক্তিদোষ (circularity) দেখা
দেয়। সুতরাং, মানদণ্ডের সমস্যার কোন সমাধান নেই |
কিন্তু সংশয়বাদের মূল বৈশিষ্ট্যকে বুঝতে আরেকটা
প্রশ্নের উত্তর দেওয়া দরকার, যেটা
হল – সংশয়বাদীর বক্তব্য অনুযায়ী যদি আমাদের সকল ধারণা ভিত্তিহীন হয় তবে তাঁর নিজের
এই বক্তব্যের ভিত্তিই বা কী? সেটি
নিজেও কি ভিত্তিহীন নয়? সেক্ষেত্রে
তাঁর বক্তব্য নিজের যুক্তিতেই খন্ডন হয়ে যায় না কি?
এর উত্তরে সংশয়বাদী সহাস্যে বলবেন যে এটা অবশ্যই
একটা গুরুতর সমস্যা হত যদি তিনি নিজের বক্তব্যকে সংশয়াতীত বলে দাবী করতেন। কিন্তু তেমনটা করবার
অবশ্যই কোন কারণ নেই। বরং তাঁর সংশয়বাদী বক্তব্যও সংশয়যোগ্য! সেটাকে জ্ঞানমূলক দাবী বলে ভাবা
উচিত নয়।
নাগার্জুনের বক্তব্যের সাথে গ্রীক সংশয়বাদের
মিলটা আশা করি এবার স্পষ্ট হয়েছে। প্রখ্যাত ভারতীয় দার্শনিক বিমলকৃষ্ণ মতিলালও তাঁর
লেখনীতে একই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে নাগার্জুনের যুক্তিও মানদন্ডের
সমস্যাকে ভিত্তি করেই গঠিত। মাধ্যমকদের অন্যতম প্রতিপক্ষ ন্যায়িক (ন্যায় দর্শনের অনুসারী)-দের বাস্তববাদী (realism)
দর্শনের বিপক্ষে নাগার্জুন যুক্তি দেন যে বহির্জগতের
জ্ঞানলাভের জন্য যে মাধ্যমগুলির প্রয়োজন, যা ভারতীয় দর্শনে “প্রমাণ” বলে অভিহিত, তাদের যথার্থতার প্রতিষ্ঠাও আবশ্যক। অথচ কীভাবে তা সম্ভব? এই প্রমাণগুলি না তো স্বপ্রতিষ্ঠিত, না অন্য প্রমাণের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, না প্রমেয় (অর্থাৎ জ্ঞানের বস্তু) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, আর না তো অকারণে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে
বহির্জগতের জ্ঞানের ভিত্তিই পাওয়া যায় না |
প্রাচ্য
ও প্রতীচ্যঃ ভিন্নতার মধ্যে ঐক্য
তবে পিরহোনীয় সংশয়বাদের প্রতিনিধি সেক্সটাসের
সাথে নাগার্জুনের বিশ্লেষণের পদ্ধতিতে একটি পার্থক্য দেখা যায় – নাগার্জুন তাঁর
বিশ্লেষণে প্রত্যেকটি সম্ভাবনা বা বিকল্পের যৌক্তিক অসারতা প্রদর্শন করে অবশেষে
নিজের অবস্থানেকেও অসার প্রতিপন্ন করে সংশয়ে উপনীত হন; বিপরীতে সেক্সটাসের পদ্ধতি হল দুটি বিরোধী অবস্থানেরই পক্ষে এবং বিপক্ষে
যুক্তি দেওয়া এবং তারপর যে পূর্বানুমানকে ভিত্তি করে এই অবস্থানের বিরোধ তার
অসারতা প্রতিপাদন করে সংশয়ে উপনীত হওয়া |
সংশয়ে উপনীত হওয়ার নেপথ্যে মাধ্যমক দর্শনের
অনুপ্রেরণা কী তা আগেই বলেছি – যে কোন তাত্ত্বিক অবস্থানকে চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করাই
হল অবিদ্যা এবং নির্বাণের অন্তরায়। সমস্ত চরম দৃষ্টিভঙ্গির অসারতা উপলব্ধিতেই একমাত্র
মুক্তি। কিন্তু
সেক্সটাসের সংশয়বাদী হওয়ার কারণ কী? গ্রীক সংশয়বাদে নির্বাণ বা মুক্তিলাভের ব্যাপার অবশ্য নেই, তার পরিবর্তে যেটা রয়েছে তা হল
অ্যাটারাক্সিয়ার (ataraxia) ধারণা, যাকে “অবিচলতা” কিংবা “সাম্যাবস্থা” বলে অনুবাদ
করা যেতে পারে। সমস্ত দার্শনিক অবস্থান গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকাতে একজন পিরহোনীয়
সংশয়বাদীর লক্ষ্য হল অ্যাটারাক্সিয়া অর্জন করা, যার মাধ্যমে স্থায়ী মানসিক প্রশান্তি লাভ সম্ভব হয়। কারণ যেখানে দৃষ্টিভঙ্গি নেই, সেখানে বিরোধ নেই আর যেখানে বিরোধ নেই সেখানে
মানসিক অস্থিরতাও নেই। সকল দৃষ্টিভঙ্গির উপশমেই মানসিক শান্তি |
তথ্যসূত্রঃ-
১. Dreyfus, G., & Garfield, J.
L. (2021). The Madhyamaka Contribution to Skepticism. International Journal for
the Study of Skepticism, 12(1), 4-26. https://doi.org/10.1163/22105700-bja10030
২. ডাঃ দেবব্রত সেন (১৯৫৫). ভারতীয়
দর্শন. ব্যানার্জী পাবলিশার্স.
৩. Mills, Ethan (2018). Three
Pillars of Skepticism in Classical India: Nāgārjuna, Jayarāśi, and Śrī Harṣa. Lanham: Lexington
Books.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন