শুরু হল, না শেষ? - চৈতালি সিংহ রায়

ঝমঝম করে অনবরত বৃষ্টি পড়ছে। কয়েকদিন ধরেই টিভিতে রেডিওতে ঘনঘন সতর্কবার্তা, নিরাপদ দূরত্বে অবস্থানের জন্য। নদীর জল বিপদ সীমার দিকে ক্রমশ এগোচ্ছে। এর ভিতরেই তীব্র বেগে ছুটে চলেছে একটি গাড়ি নদীর সেতুর দিকে। একটা জোর শব্দ.... কিছুদূর গিয়েই থেমে গেল গাড়িটা। একটা ছেলে নেমে সেতুর রেলিংয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ওঠে ছেলেটার কন্ঠস্বর, “খুব ভালোবাসতাম বৈশাখী তোমাকে। তোমার দেওয়া এই আঘাতটা আমার সহ্যের বাইরে। তোমার প্রত্যাখ্যান আমি মেনে নিতে পারছিনা।” ছেলেটা সেতুর রেলিংয়ে পা দিয়ে উঠে প্রস্তুত, ঠিক সেই মুহূর্তে ওর কানের কাছে ভেসে আসে একটি নারী কন্ঠস্বর, “এই যে শুনছেন..!”

রেলিং থেকে নিচে নেমে আসে ছেলেটা।

- “আমাকে বলছেন?”

- “আশেপাশে তো কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা, তার মানে আপনাকেই ডাকছি।”

- “হ্যাঁ বলুন!”

- “আমার মাকে দেখেছেন? কোথায় যে এল এই ঝড় জল মাথায় করে!”

মা’ শব্দটি কানে বাজতেই বুকের ভিতরটা কেমন যেন করে উঠলো ছেলেটির। নিজেকে সামলে বললো, “নাহ্, আমি তো কাউকে দেখিনি।”

- “আমাকে একটু সাহায্য করবেন আমার মাকে খুঁজে দিতে?”

- “নাহ্, আমার কাজ আছে।”

- “দয়া করে একটু সাহায্য করুন। তারপর না হয় আপনি আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করবেন।”

অন্ধকারে ছেলেটা স্পষ্ট মেয়েটার মুখটা বুঝতে না পারলেও কন্ঠস্বরে ছিল ভীষণ রকমের দাবী। পারলনা ছেলেটা এড়িয়ে যেতে।

ব্রিজের মাঝখান দিয়ে চলা শুরু করলো ওরা। সে যেন শুনতে পাচ্ছে নিজের মায়ের কন্ঠস্বর, “বাবা, তোর কী মনটা খারাপ? চিন্তা করিসনা আমি তো আছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। লড়াই ছাড়িস না। যারা তোকে ভালোবাসে তাদের কথা ভুলিসনা। তুই কাকে ভালোবাসিস সেইটা বড় কথা নয়।”

ঠিক তখনই একটা গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে হুস করে বেরিয়ে গেল। হেডলাইটের আলোয় জ্বলজ্বল করে উঠলো শূন্য ব্রিজটা।

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন