ভিড়টা বাড়তেই হঠাৎ একা লাগছে কেন? অন্যদিন এমন হয় না। একা হলেই সে আসে। কথা বলে। মানে ভেসে ওঠা কোনও দিন, ঘটনা, স্পষ্ট চোখ মুখ। ট্রেনে, বাসে, বাইকে এভাবে তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে বহুদূর একা-একা চলে যাই। কিন্তু আশ্চর্য, আজ কিছুতে কেউ আসছে না। চোখের পাতায় কিছু ফুটছে না। কিন্তু কেন! ট্রেনটা বারাসাত ছাড়াল।
জানলার ধারে একা-একা বসে আছি। মুখ তুলে ফের
সামনে দাঁড়ানো বৃদ্ধাটির দিকে তাকালাম। এখনও জানলার শিক ধরে দাঁড়িয়ে আছে। খানিক
ঝোঁকা, কোমরে হাত, হয়তো আর পারছে না। কিন্তু কেউ কোনো সিট দেয়নি।
বয়স? কত হবে, চুরাশি-পঁচাশি। আহা, কী দারুণ দেখতে! কুঁচকানো হাতদুটোয় দু-গাছা চুড়ি। মুখটায় এক শান্ত
আভিজাত্য লেগে আছে। বড়ো বড়ো মায়াবী চোখদুটোয় কোনও প্রার্থনা নেই, অভিযোগও না। রাগ হল। কেন বাবা, কারও কাছে একটু সিট-ফিট চাইলে কী হয়। বেশি
বেশি।
নাহ্, ভাল্ লাগছে না। আমি কি ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছি!
বাঁচতে গেলে একটা ‘সে’ লাগে?
গত সপ্তাহে অবশ্য এমন একা লাগেনি। যেতে যেতে মা
ফুটে উঠেছিল। কত বছর আগের এক ছবি। দেখি, মা একটা রেশন তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে যেতেই বলে ওঠে, ‘ও, খোকা এসেছিস? নে, এবার একটু দাঁড়া।’
বলি, ‘না না, আমার এখন কাজ আছে।’
‘একটু দাঁড়া না বাবা।
সেই থেকে দাঁড়িয়ে। পা দুটো ফেটে যাচ্ছে।’
‘ওহ্, বললাম তো পারছি না।’
‘একদিন না থাকলে বুঝবি।
হাজার ডাকলেও আর পাবি না।’
তো মা আর নেই। ডেকে ডেকে আজ পাচ্ছি না। মনে হতেই
হঠাৎ উঠে দাঁড়ালাম। বললাম, ‘বসুন
আপনি।’ বলে হৃদয়পুর আসতেই বৃদ্ধাকে এবার বসতে দিলাম।
কানে বাজল, ‘খোকা!’
হৃদয়পুরের ডাক না পেলে মায়ের কষ্ট উপলদ্ধি করা সম্ভব নয়। বিলম্বে বোধোদয়। ভালো লাগল গল্পটা।
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন