জগন্নাথের চল্লিশ বছরের চাকরী জীবনে সে এই লাইব্রেরীতে অনেক ‘লাইবেরী’ বাবুদের
যেতে আসতে দেখেছে। এখনকার ইনচার্জ বিজনবাবু কড়া হলেও বড় ভাল মানুষ। একমাত্র তিনিই
যে দুপুরে খাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করেন জগন্নাথ খেয়েছেন কি না। মাঝে মাঝে কাজের ফাঁকে
যখন চা খাওয়ার জন্য হাঁক পরে তখন গল্পের ছলে জগন্নাথের বাংলাদেশের ফেলে আসা
গ্রামের গল্প, মৃতা স্ত্রীর গল্প, ছেলেদের গল্প
সব মন দিয়ে শোনেন। আজ শেষ দিনে তিনি যখন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফুলের
তোড়া দিয়ে, উত্তরীয় পরিয়ে জগন্নাথকে সম্মান জানালেন। জগন্মাথ উত্তরীয়ের খোঁটে চোখ মুছতে মুছতে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছিলেন তাকে। চলে আসার সময় বাদামী কাগজে মোড়়ানো একটা প্যাকেট তার হাতে
তুলে দিয়ে বিজনবাবু বলেছিলেন, “খুব ভালো থাকবেন। মাঝে মাঝে মনে হলে চলে আসবেন।“
সারা রাস্তা কৌতূহল চেপে রেখে বাড়ি ঢুকে মোরক খুলতেই জগন্নাথ কেঁদেই ফেললেন।
ঠিক তার মায়ের যেমনটা ছিল তেমনই লাইব্রেরীতে লাল শালুতে মোরানো পুরনো একটা
কাশীদাসী মহাভারত ছিল। সেটা জগন্নাথ প্রথমদিন থেকে দিনে অন্তত দুবার ঝাড়পোঁছ
করতেন ৷ তার গায়ে হাত বোলালে মনে হত যেন মায়ের পা স্পর্শ করছেন। অনেকবার
‘লাইবেরী বাবুদের’ কেউ কেউ কাঠের সিঁড়ি লাগিয়ে ওটা বার বার পারতে দেখে তাকে বকুনিও দিয়েছেন। বিজনবাবু
সেই চকচকে নতুন একখণ্ড মহাভারতই উপহার দিয়েছেন তাকে। টকটকে লাল শালু কাপড়ে মুড়িয়ে ।
বেশ ভালো লাগল।
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন