দীপুদা ও রুইমাছ - বিপ্লব নসিপুরী


পুকুরের জলে ছোটো একটা পাথরের টুকরো পড়তেই আচম্বিতে পিছনে তাকিয়ে দীপু দেখলে হাসি হাসি মুখে বিনু দাঁড়িয়ে আছে। দীপু বললে, 'ও তুই। অন্য কেউ হলে ঐ পাথরের  টুকরোর মতো তাকেও জলে ছুড়ে ফেলে দিতাম। '

'তাহলে তোমার কাছে আমার একটু কদর আছে বলছ।'

আছে বলেই তো তুই এখনো এখানে  দাঁড়িয়ে আছিস। তা পড়াশোনা বাদ দিয়ে এ সময় এখানে।'   

'পড়তে ভালো লাগছিল না। ভাবলাম তোমার সঙ্গে একটু আড্ডা মেরে আসি।'  

'বোস্ এখানে।'

তারপর বড়শিতে হাতের অঙ্গুলি ডলিকৃত কৃষ্ণ নোংরাময় ময়দার টোপ লাগিয়ে পুকুরের জলে নিক্ষেপ করল দীপু। পশ্চিমে ঢলে পড়া আদিত্যর পড়ন্ত বিকেলের আধমরা রক্তিম আভাটুকু তাদের দুজনের মুখকে রাঙিয়ে তুলছে। জলে ছিপের ফাৎনাটা একটু নড়াচড়া করতেই বিনু বলল, দীপুদা, খাচ্ছে। দীপু চাপা স্বরে বলল, দাড়া আরও ভালো করে খাঁক তারপর তুলব। ফাতনাটা আরও একটু জলের তলে যেতেই একটা টান দিল ছিপে। কিন্তু শূন্য লোহার বড়শিটা দেখে দীপু বলে ওঠে, যা!ফস্কে গেল।‘       

'আমি তখুনি বলেছিলাম খাঁচাও। তাহলে এতক্ষণ মাছবাবাজী জল ছেড়ে ডাঙায় খাবি খেত।‘ 

আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দীপু বললে, দশ বছর ধরে মাছ ধরছি  আর আজ তোর কাছে শিখতে হবে কীভাবে মাছ ধরব।

মুখে হালকা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বিনু বললে, ‘চোটছ কেন?শিক্ষকরাও তো মাঝে মাঝে ছাত্রদের কাছ থেকে শেখে নাকি।

'ও সব দুর্বল শিক্ষক। যাদের বিষয়জ্ঞান কম। আমার মাছ ধারায় পিএইচডি  আছেবুঝলি।'

 'বুঝলাম, তুমি হলে গিয়ে ডক্টর ইন ফিস্। তা মাছের ডক্টর তুমি কী কখনো মারমেইড দেখেছ?'                                

'কী?'

'মারমেইড অর্থাৎ 'মৎস্যকন্যা' যাদের নিচের দিক মাছের মতো আর উপরের দিক মানুষের মতো।'

 'তা আবার হয় নাকি। '          

'হয় আমি গল্পে পড়েছি।'           

'গল্পে তো গরুও গাছে উঠে। বাস্তবে হয় কি? তবে মানুষের মাঝে কখনো কখনো মানুষরূপী মাছ দেখতে পাওয়া যায়

'কীরকম'  

'তারিণী জেঠুকে গ্রামের সবাই গভীর জলের মাছ বলে না।'              

দুজনেই হো হো করে  হাসতে থাকে।পাশে বসে থাকা ঝাঁকড়া  ধুতুরা গাছটা মাইকের মতো কান দিয়ে এই অসমবয়সী দুই বন্ধুর কথা শুনে নিজেও যেন  হেসে ওঠে। 

 

ছুটির দিন সেই দুপুরে ভাত খেয়ে পড়তে বসেছিল বিনু।টানা তিন ঘন্টা পড়ার পর বিরক্তিভাব গ্রাস করল তাকে। উদাসী মনটাকে আনন্দের খোরাক দিয়ে ভরিয়ে দেবার জন্য এই দত্তপুকুরে এসেছে খানিকক্ষণ আগে। দীপুদার সান্নিধ্য তার মনটাকে খুশিতে ভরিয়ে দিল। এই এক ব্যক্তি যার কাছে এলে বিনুর বেলুনের মতো ফোলা খারাপ লাগাটা নিমিষে চুপসে যায়। তার অগভীর মনের তল থেকে অবাঞ্ছিত গজিয়ে ওঠা খারাপ লাগার আগাছাগুলো নির্মূল করে স্বস্তিদান করে।  কিন্তু বিনু কখনোই দীপুদার মনের গভীরতার তল খুঁজে পায়নি। বাবার কাছে শুনেছে দীপুদার দুই বছর বয়সে তার মা মারা যায়। পড়াশোনায় খারাপ ছিল না। মাধ্যমিকের সময় বিধাতা তার বাবাকে ডেকে নিয়ে দীপুদাকে অনাথ করে দেয়। এ যেন অকূল পাথারে নাবিকহীন তরী। দাদা বৌদির সংসারে পড়াশোনার মতো বিলাসিতার জীবনের চাকা বেশি দূর গড়াল না। দাদার মাঠের কাজ, বৌদির ফাইফরমাশ করতে করতে ক্রমে লেখাপড়ায় পরে দাঁড়ি। তবে এ হেন দুখী মানুষের চোখে-মুখে কখনো দুখের কালো ছায়া দেখেনি বিনু। ঊষার সূর্যের মতো দীপ্তবদনকে আড়াল করতে পারেনি দুঃখের কালো মেঘ। মনের কোন্ স্তরে দুখী ভাবটা গভীর নিদ্রায় মগ্ন তা এতদিন মেলামেশা করেও টের পায়নি।     

 পশ্চিম দিগন্তে গোধূলির লাল আভা দেখতে দেখতে বিনু বলল, আজ আর তুমি মাছ পাবে না। দিন ফুরিয়ে এলো বলে। পাখিরা তাদের বাসায় ফিরে যাচ্ছে। মাছেরাও তাদের ঘরে ফিরে যাবে।‘                    

 ‘দাড়া না একটু।’

বলতে না বলতেই ফাঁৎনাটা একটু নড়ে উঠল।জলে কিছুটা ডুবে যেতেই দীপুদা ছিপে মারলে টান। ডাঙা থেকেই বিনু দেখলে মাছবাবাজী লোহার বড়শিকাঁটায় গাঁথা পড়েছে। বন্দী হয়েও ছটছট করছে মুক্তির প্রবল আকাঙ্খায়। সহজে নতিস্বীকার করবে না।দীপুদাও ছাড়ার পাত্র নয়। শুরু হল ডাঙ্গার জীবের সঙ্গে জলের জীবের  অসম লড়াই। পরিশেষে  দীপুদার দশ বছরের অভিজ্ঞতার কাছে হার মানলে একেবারে শিক্ষানবীশ জলের মীন। জলে ক্রমশ দৌড়ঝাপ করতে করতে যেই একটু ক্লান্ত হয়েছে, ছিপের সুতো একটু আলগা হয়েছে দীপুদা মারলে টান। মাছবাবাজী জল ছেড়ে ডাঙায় খাবি খেতে শুরু করল। প্রায় দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ দেখে অবাক হয়ে গেল বিনু। মাছটাকে ঝোলাতে বন্দী করে দীপু বলল, সবুরে মেওয়া ফলে বুঝলি।

 ‘মেওয়া নয় বলো মাছ। সবুরে মাছ ফলে।বিনুর কথা  শুনে মৃদু হেসে দীপু বলল, চল্।‘            

'কোথায়?’                  

'চল্ না।'             

 দীপুদার পেছন পেছন ছায়াসঙ্গী হয়ে বিনু চলতে থাকে। ওদিকে তখন সন্ধ্যাতারা আকাশের বুকে চুপচাপ স্থবির হয়ে  তাদের দিকে  এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। 

 

হালদার পুকুরকে বাঁয়ে রেখে সরু লাল মোরামের রাস্তা ধরে খানিকটা গিয়ে তারা উপস্থিত হল প্রভাত দত্তের বাড়ির সদর দরজায়। লোহার বড়ো গেট। দুমানুষ উচ্চতার পাঁচিলের আড়ালে নববধূবেশে দাঁড়িয়ে আছে দ্বিতল পাকা বাড়িটা। আটগ্রামে যে কজন বড়োলোক পয়সাওয়ালা লোক আছে তাদের মধ্যে প্রভাত দত্ত অন্যতম। সুদের কারবার থেকে ধান-চালের আড়ৎ এই করে তার জমানো টাকার পরিমাণ ছোটোখাটো কুমির প্রায়। 

দরজার কড়া নাড়তেই ভেতর থেকে দরজা খুললেন প্রভাত দত্তের স্ত্রী। আলো আঁধারের সন্ধিক্ষণে এসে তাদের না চিনতে পেরে বললেন, 'কে?’ দীপু বলে ওঠে, আমি, দ্যাখো তোমার জন্য কতবড় রুই মাছ এনেছি।

খানিকটা বিরক্তিভাব নিয়ে প্রভাত দত্তের স্ত্রী বললেন, হতচ্ছাড়া, তুই আবার সন্ধেবেলা মাছ  এনেছিস।নিয়ে যা এখান থেকে।‘

দীপু মাছ পেলেই বিদিশাকাকিমার কাছে বিক্রি করে যায়। তাই আজ এতবড়ো রুই মাছ পেয়ে সে বিদিশাকাকিমার কাছেই এসেছে। দীপু নরম সুরে বলল, নাও না গো।তোমাদের তো ফ্রিজ আছে। আজ কিছুটা রাঁধবে আর বাকিটা কাল

বিদিশা কাকিমা বললেন, উনি রাগ করবেন।

এ শুনে দীপুদা সহাস্যবদনে বললে, কাকার পাতে যখন রুই মাছের মুড়োটা দেবে কাকার রাগ তখন গলে জল হয়ে যাবে।'

কাকিমা খানিকটা লজ্জিত স্বরে  বললেন, তোকে আর বকবক করতে হবে না। দিয়ে যা। টাকা কিন্তু পুরো পাবি না।

সন্ধেবেলা মাছটা গছাতে পেরে দীপু খুব খুশি হল। সে জানত কাকিমা মতই রাগ করুক মাছ সে নেবেই। আর টাকা-পয়সার হিসাব তো কাকিমার কাছে চলে না। আজ অবধি মাছ বিক্রি করে সে এক টাকাও নেয়নি।

মাঝে মাঝে কাকিমা বলেন, দীপু,তোর মাছ বিক্রির অনেক টাকা আমার কাছে গচ্ছিত আছে। নিয়ে যাস,না নিলে আমি কিন্তু সব খরচ করে ফেলব।

তার প্রত্যুৎত্তরে হাসি হাসি মুখে দীপু বলে, ‘পারলে খরচ কোরো। আর আমার যেদিন দরকার পড়বে সেদিন তোমার কাছে চেয়ে নেব।এখনো পর্যন্ত সে টাকার দরকার পড়েনি।

দীপুর কাছ থেকে মাছটা নিয়ে কাকিমা বললেন, তাহলে রাত নটার সময় হাজির হয়ো। আজ রাতের খাবার আমাদের সঙ্গেই কোরোপ্রতিবার মাছ দিয়ে দীপু কাকিমার বাড়িতে মাছভাত খায়।

একদিন একটা কাতলা মাছ বৌদির হাতে দিয়ে হাসি হাসি মুখে বলেছিল, ভালো করে ঝাল দিয়ে মাছের ঝোল রান্না কোরো। আর একটু বেশি চাল নিও আজ।

জ্বলন্ত উনুনের মতো গনগনে রক্তবর্ণা মুখ করে নীলা বলে উঠলে, ‘ও! আমার  বড়োলোকের ব্যাটা এলো রে। দাদার বুঝি চালের আড়ৎ আছে। ঐটুকু তো জমি, কতটুকু আর ধান হয়। আর তোমার  কাঁড়ি কাঁড়ি ভাত না গিললে নয়।‘ 

তোর পাশে ও কে রে?’, কাকীমার প্রশ্নে সংবিৎ ফিরে দীপু বলল, ওকে চিনলে না, ও তো পরেশকাকার ছেলে বিজন। পড়ায় খুব ভালো।‘ 

নাম শুনেছি। এ পাড়ায় মনে হয় আসা কম।তাই চিনি না।তারপর বিনুর দিকে তাকিয়ে বললেন, বাইরে কেন, ভেতরে এসো। দীপু ওকে নিয়ে ঘরে আয়। সন্ধে জ্বালব,তারপর যাস্।‘               

 কাকিমা উঠোনে তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে শাঁখ বাজালেন। বিনুর কাছে এসে  কাকিমা বললেন, তুমিও দীপুর সঙ্গে রাতে চলে এসো। একসঙ্গে দুজনে আমাদের বাড়িতে খাবে।

লজ্জালজ্জা মুখে বিনু বলল, আজ নয় কাকিমা।অন্য একদিন আসব।

 ‘কেন, সংকোচ হচ্ছে।‘ 

পাশ থেকে দীপু বলল, ‘সংকোচ কিসের। আমি ডেকে নিয়ে আসব তোকে।

না, আজ থাক অন্য একদিন আসব।

দীপু কী বলতে যাচ্ছিল, কাকিমা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ঠিক আছে আজকের খাওয়াটা অন্যদিনের জন্য তোলা থাকল।

দুজনের হাতে দুটো বাতাসা দিতেই তারা অন্ধকারে চেনা পথ দিয়ে হাওয়ার ন্যায় মিলিয়ে  গেল। দিবাকরের অবর্তমানে নেমে আসা ধরার বুকের  জমাট অন্ধকারকে দূর করতে প্রদীপের ক্ষুদ্র শিখা প্রাণপণে চেষ্টা করে চলেছে। 

বারবার মাছের মুড়ো দিয়ে আমার রাগ কমানো যাবে  না বুঝলি। আমার পুকুরে মাছ ধরে আমাকেই বিক্রি। দাড়া তোর মজা দেখাচ্ছি। মাছের মুড়ো থেকে ঘিলুটা চুষতে চুষতে রাগী রাগী মুখ করে প্রভাত দত্ত বললেন

দীপু এক গ্রাস ভাত মুখে পুড়ে চিবোতে চিবোতে বলল, ‘পুকুর তোমার হতে পারে কিন্তু ঐ মাছটা আমার।

'পুকুর আমার আর মাছ তোরকীভাবে হয় শুনি?’

বসন্তকাকু মাছের চারা বিক্রির সময় আমাকে দু -একটা চারামাছ দেয়। সেগুলো আমি তোমার পুকুরে ফেলে দিই।‘ 

বসন্ত হালদার হল চারামাছের ব্যবসায়ী। সে সাইকেলের পেছনে বড়ো ষ্টীলের হাড়িতে জল রেখে ছোটো ছোট রুই কাতলা প্রভৃতি মাছের চারা গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে। হাঁড়িটাকে সাইকেলের কেরিয়ারে খারাপ টিউব দিয়ে টান টান করে বেঁধে রাখে যাতে চলার সময় পড়ে না যায়। আর হাঁড়ির মুখটা ছেঁড়া মশারির অংশ দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে যাতে মাছগুলো বাইরে আসতে না পারে আবার পর্যাপ্ত বাতাসও পায়। মাঝে মাঝে হাঁড়ির মধ্যে হাতের তালু দিয়ে ছলাৎ ছলাৎ করে। হাঁড়ির ভিতর  একঝাঁক ছোটো  মাছগুলোর অনবরত এপাশ ওপাশ করা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখত দীপু। ছোটোবেলায় তার অধীর আগ্রহ দেখে মাঝে মধ্যে বসন্ত হালদার দু একটা চারামাছ দিত। সে হরলিক্সের কাচের বয়ামে ঐ মাছগুলো রাখত।মুড়ি, ভাত গুড়ো গুড়ো করে আবার কখনো ছোটো ছোটো পোকা ধরে দিত। মাছ গুলো একটু বড়ো হলে ঐ পুকুরে ফেলে দিত।   

খানিকটা জোরের সাথে প্রভাতবাবু বললেন, তোর ওটুকুন মাছ আমার খাবার খেয়ে যে এতো বড়ো হল। আমি খাবার না দিলে তোর ঐ মাছ বাঁচত। কবেই মরে অক্কা হয়ে যেত।

প্রতিবাদের স্বরে দীপু বললে, কে বলল তোমার খাবার খেয়েছে। বৌদি তো ঐ পুকুরে এঁটো থালা - বাসন ধোয়। আমাদের খাবারের উচ্ছিষ্ট তো সব ঐ পুকুরেই পরে। ঐ এঁটোকাঁটা খেয়েই তো  মাছগুলো বড়ো হয়েছে। আর এই খাবার তো তোমার মাছও খেয়েছে।

দীপুর এই অকাঠ্য যুক্তি শুনে বিশালবপু মেদবহুল শরীরের প্রান্তে অবস্থিত বিকটাকার মুখে অজস্র অভিব্যক্তি ফুটিয়ে প্রভাত দত্ত বললেন, আমার সঙ্গে ফাজলামি! একটা পয়সাও তুই পাবি না। আমার পুকুরভাড়া হিসেবে তোর মাছ  আমি নিলাম। আর এই যে ভাত খাচ্ছিস তার দাম... ।‘        

 কথা শেষ করতে না দিয়েই ভেতর থেকে কাকিমা এসে বললেন, তোমার মুখে কী কিছুই আটকায় না। ছেলের বয়সী একটা ছেলেকে ভাতের খোঁটা দিচ্ছ। কে খাবে তোমার এ অগাধ সম্পত্তি। ভগবান আমাদের সন্তান না দিয়ে ভালোই করেছেন।বলেই আঁচল দিয়ে মুখ চেপে ভেতরে চলে গেলেন

আজ প্রায় কুড়ি বছর হল ওদের বিয়ে হয়েছে। ভালো বৌমা,ভালো পত্নী, ভালো গ্রাম্যবধূ হয়ে উঠতে পারলেও 'মা' হয়ে ওঠা তার এখনো হয়নি। কাকিমা, জেঠিমা,ঠাকুমা ডাকের প্রান্তে থাকা মা শব্দটা শুনেই তার কর্ণকে ক্ষান্ত থাকতে হয়েছে। নারীদেহের ভেতরে  থাকা মাতৃত্বের অমৃত মাঝে মাঝে ছেলে - মেয়েদের মধ্যে বিতরণ করে সে মাতৃত্বের  স্বাদ পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা করে। বাপ মা মরা দীপুকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসে সে। তাই স্বামীর মুখের নিষ্ঠুর কথাগুলো সহ্য করতে না পেরে স্বামী আজ্ঞাপালনা বিদিশা বলে উঠল ঐ কথাগুলো। প্রভাত দত্ত টের পেলেন কথাগুলো একটু রূঢ় হয়ে গেছে। কিছু কিছু ঘা থাকে যা বাইরে থেকে শক্ত মনে হলেও সামান্য আঘাতেই বিকট মূর্তি ধারণ করে। বিদিশার মাতৃত্বের ঘাটা সেইরকম। তিনি শান্ত ভাবে খেতে শুরু করলেন।সামনে বসে থাকা দীপু নিশ্চুপ হয়ে ভাতের দানা খুঁটছে। মার স্নেহ বর্জিত দীপু একজন সন্তানহীনা মায়ের কষ্টটুকু উপলব্ধি করতে পেরে চুপ চাপ ভাতের থালা ফেলে উঠতে যাবে এমন সময় কাকিমা এসে বললেন, ভাত ফেলে উঠবি না। বোস্।‘ তারপর দীপুর ঝাঁকরা মসিমাখা চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, কাকুর কথায় কিছু মনে করিস না। আমি তো তোর মা এর মতো। যখনই ইচ্ছে হবে তখনই আসবি। কাকুর কথায়  মনে রাগ পুষে রাখিস না। বলেই একদলা ভাত দীপুর মুখে দিয়ে দিলেন। দীপুর দু চোখের পাতা ভারী হয়ে এল। বিনু দেখতে পেলে না, দীপুর মনের গভীরে থাকা দুখি মেঘটা নয়নপ্রান্তে এসে বারিবর্ষণ শুরু করেছে। বাইরের উঠোনে তখন মেঘমুক্ত আকাশ নির্গত  স্বর্ণাভ জোছ্না বাচ্চা ছেলের মতো হুটোপুটি খাচ্ছে 


1 মন্তব্যসমূহ

  1. কেমন যেন সেই রামের সুমতি, মেজদিদির সময়ে ফিরে গিয়েছিলাম। কাহিনিতে সেই অর্থে বিশেষ কিছু নেই অথচ কী রকম মন ছুঁয়ে যায়...

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন