অসীমার অকাল প্রয়াণে বেদনাদীর্ণ মিনু। চেয়ে থাকে মায়ের নিথর মুখের দিকে। মনে হাজারো স্মৃতির নিশ্চুপ উপস্থিতি। তিতির বসে রয়েছে মিনুর পাশে, দিদার অকাল প্রয়াণে গভীর শোকের ছায়া তারও দু চোখে। মায়ের সঙ্গে তিতিরও অসীমার শেষ যাত্রার সঙ্গী আজ। চুল্লির সামনের বড়ো চাতালে মিনুর সঙ্গে বসে রয়েছে তিতির অসীমার মরদেহ আগলে।
শ্মশান যাত্রীরা এই চাতালেই মৃতদেহ ঘিরে অপেক্ষা
করে দাহ না হওয়া পর্যন্ত। চাতালের চারপাশে মন্থর গতিতে হেঁটে চলে তিতিরের দৃষ্টি।
বড়ো যন্ত্রণার সে পরিবেশ। এখানের বাতাসও যেনো বিরহের করুন কথা বলে। ধূপের
উগ্রগন্ধ, রজনীগন্ধার সুবাস হরিবোল
ধ্বনির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জানান দেয় জগতের সমুদয় শোকের উপস্থিতি।
অসীমার মাথায় হাতের আলতো পরশ টুকু রেখে বসে আছে
মিনু। " মা " তিতির ডাকে।
" বল " মুখ না তুলে
সাড়া দেয় মিনু।
" বাবা বর্ধমান পৌঁছে গেছে, আর হয়তো এক
ঘন্টা..."
নিশীথ অফিসের কাজে গিয়েছিলো আসানসোল। আরো একদিন
থাকবার কথাছিল সেখানে। আজ সকালে তিতিরের কাছে দুঃসংবাদ পেয়ে ফিরে আসছে। বারবার
ফোন করেছে নিশীথ তিতির কে, খবর নিয়েছে এদিককার। সমর আর দু একজন বন্ধুকে ফোন
করে অসীমার শ্মশান যাত্রার ব্যবস্থা করেছে নিশীথ, নয়তো মিনু আর তিতিরের পক্ষে সম্ভব ছিল না সে কাজ।
অসীমা মারা গেছে আজ ভোরে। ঘুম ভাঙ্গার পর বিছানা
থেকে মেঝেয় পা ফেলতেই ঘটে বিপত্তি। মাথা ঘুরে ঘরের মেঝেতে পরে যায় অসীমা। খাটের
বাজুতে আঘাত পায় মাথায়। পাশেই শুয়েছিলো বকুলের মা। অসীমার বিছানা ছাড়া টের
পায়নি, পরে যাবার শব্দ শুনে ঘুম
ভাঙ্গে তার। সঙ্গে সঙ্গেই ফোন করে মিনুকে। তিতির আর মিনু এ বাড়ি পৌঁছানোর আগেই
শেষ হয়ে যায় সব কিছু।
অভ্যাস মতো আজও খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছিলো মিনু।
অন্য দিনের মতো কাজের তারা ছিলো না আজ। নিশীথ বাড়িতে নেই, তিতিরের কলেজ ছুটি।
আলস্য জড়িয়ে মেয়ের পাশে শুয়েছিল মিনু। বকুলের মা ফোন করে তখন, " বড় দি তাড়াতাড়ি
..."।
শেষ তিনচার দিন বেসুরে বেজেছে অসীমার শরীর।
ঠাণ্ডা লেগে বুকের সংক্রমণ। তার থেকে জ্বর। ব্লাড প্রেসার নিচের দিকে। হাঁটা চলা
করলেই মাথা টলমল করে। খুব প্রয়োজনে বকুলের মায়ের হাত ধরেই পা ফেলেছে অসীমা নয়তো
বিছানাতেই কেটেছে এই কয়টি দিন। অসীমার অসুস্থতার কারণে দুশ্চিন্তা নিয়ে এবাড়ি
ওবাড়ি করেছে মিনু, তিতির, নিশীথও। তবে শেষ একবছর এবাড়ি ওবাড়ি যাতায়াতটা
নিয়ম হয়ে উঠেছিলো মিনুদের।
বিনুর মৃত্যুর পর থেকেই অসীমকে নিয়ে ভাবনার শেষ
ছিলো না ওদের। ছোটো মেয়ের হঠাৎ চলে যাওয়ার দিন থেকেই নিভৃতে নিজের দিন গুনেছে
অসীমা , বাঁচার ইচ্ছে হয়ে
উঠেছিলো নিষ্প্রভ। মিনু বার বার বলেছে অসীমাকে "ওবাড়িতে চলো, সবার সঙ্গে থাকবে"।
কে শোনে কার কথা! থাকবার ইচ্ছে থাকলে তবে না প্রশ্ন ওঠে সবার মাঝে থাকার। বিনুর
মৃত্যু অসীমার বুকে জ্বেলে দিয়ে গেছে বেদনার দীপশিখা। সে শিখার আগুনে নিয়ত দগ্ধ
হয়েছে অসীমা।
সকাল থেকেই পরিচিত পরিজনরা এসেছে অসীমাকে দেখতে।
তাদের নিচু সুরের টুকরো কথায় ফিরে ফিরে এসেছে অসীমা, অনিবার্য ভাবে এসেছে
বিনুও। ছোটো মেয়ের মরন প্রশস্থ করেছে অসীমার চলে যাবার পথ, সবার মুখেই ঘুরেছে এ
কথা। সে কি সত্যি? ভেবেছে মিনু। তোলপাড় হয়েছে তার বিষন্ন মন এই
ভেবে যে, অসীমার চারপাশে সকলেই তো
ছিলো তাহলে একজনের না থাকার ছায়া সকলের উপস্থিতিকে গাঢ় আঁধারে ঢেকে দেয় কি
ভাবে! সত্যিই বড়ো বিচিত্র মানব মন। চারপাশের বস্তুর সমুজ্জ্বল উপস্থিতিতে মানুষ
যে আনন্দ পায়, হারিয়ে যাওয়া বস্তুর যন্ত্রণা যেনো তার অনেক গুণ বেশি
হয়ে বাজে বুকে।
"আট নম্বরের বাড়ির লোক কারা আছেন দাদা?"
আচমকা আছড়ে পড়লো প্রশ্নটা, চলতে থাকা গুঞ্জন থমকে
দাঁড়ায় চাতালে। আট নম্বর, শুনেই মুখ তুলে তাকায় তিতির। দেখে চুল্লির গেটের
সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক ভদ্রলোক, তার সন্ধানী দু চোখ খুঁজে চলেছে সঠিক ব্যাক্তিকে।
আজানুলোম্বিত উপবীত, পরনের কাপড় জানান দেয় ইনি এই ঘাটের পুরোহিত।
ইহকাল ও পরকালের মাঝের বৈতরণী টুকু পার করার বৈঠা এনার হাতে। তিতির খোঁজে সমরকে।
চাতালের একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলো সমর। হাত তুলে জানান দেয় উপস্থিতি অর্থাৎ আট
নম্বরের বাড়ির লোক সেই। মৃতদেহ দাহ করার আগে শ্মশানের কাউন্টারে মৃতব্যক্তির
সচিত্র প্রমাণ পত্র ও ডেথ সার্টিফিকেট জমা দিলে মিলবে একটি টোকেন নম্বর। সেই নম্বর
ক্রমেই হয় দাহ। অসীমা আজ আট। সাতের দাহ চলছে, এরপর অসীমার পালা। সমরকে দেখে এগিয়ে আসে পুরোহিত, " আপনারা বডি তৈরি রাখবেন, আমি ওই দিকটা মিটিয়ে
আসছি।" কথাগুলো সমরের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে রণপায়ে হাঁটা দিলেন পুরোহিত গঙ্গার
ঘাটের দিকে, কাঠের চিতায় দাহ চলছে সেখানে।
তিতিরের ফোন বেজে ওঠে। মা, উত্তরপাড়ার দিদা তোমাকে
চাইছে। অসীমার দিদি তনিমা, উত্তরপাড়ায় থাকে। আজ সকাল থেকে তনিমা অনেকবার
ফোন করেছে মিনুকে। বোনের মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল তনিমা। শেষ বারের মত বোনকে দেখতে না
পারার আক্ষেপ তার সুরে স্পষ্ট। " কি করে যাই মিনু, তোর মেসোমশাই বিছানায়।
বাড়িতে দ্বিতীয় মানুষটি নেই যে তার ভরসায় তোর মেসোমশাই কে রেখে একটিবার ঘুরে
আসি..."। মিনু বোঝায় তনিমাকে, " তুমি আবার বেরোতে গিয়ে
নতুন কি বিপদ বাঁধে, তারচেয়ে বাড়িতেই থাকো, আমরা..."।
" গেলো হপ্তায়ও কথা হলো
ফোনে, তখন তো বুঝিনি চলে যাবে
আমাকে ফেলে। তবে কি জানিস মিনু..."। এমন প্রসঙ্গ যে আসবে জানতো মিনু। আজ সবার
মুখেই ঘুরেছে বিনুর কথা। না থেকেও বিনু আজ সবসময় রয়েছে।
শেষ হয়েছে অসীমার মুখাগ্নি। গঙ্গার ঘাটে এসে বসে
মিনু। সামনে অনন্তপ্রবাহিনী গঙ্গা। মিনুর দৃষ্টি ভেসে চলে ভাটির স্রোতের টানে।
অজস্র চুপকথা ভিড় করে চারপাশে। জীবনের নানান মুহূর্ত উঁকি দেয় মনে। সে সব কথা
কখনো খুশির বর্ণে উজ্জ্বল আবার বেদনার ধূসর বর্ণে ধূসরিত কখনও। জীবন বুঝি এক চলমান
চালচিত্র। অলক্ষ্যে থেকে কোনো চিত্রকর তার খেয়ালী তুলির টানে সজীব করে তোলে সে
চিত্রকে নিত্যদিন। বর্ণের হেরফেরে সে জীবনে আসে আনন্দ আবার কখনো বা দুঃখের কালো
মেঘ। ভাবনায় চির ধরে মিনুর। ভেসে আসে কোলাহল। তাকিয়ে দেখে ঘাটের থেকে কিছুটা
দূরে প্রজ্বলিত কাঠের চিতায় চলছে মৃতের সৎকার। বহ্নিমান চিতার লেলিহান শিখা
নির্দয়ভাবে ব্যস্ত দহন কর্মে। কালো ধোঁয়ার রেখা চিতার সঙ্গ ছেড়ে ভেসে চলে উদাসী
বাতাসের টানে। ইহকালের পর্ব শেষে স্বজন পারি দেয় পরকালে। ধোঁয়ার বিলীয়মানতার
মতই সময়ের গর্ভে বিলীন হবে তার উপস্থিতি। চিতার দিকে চেয়ে দেখে মিনু। বিষণ্ণতায়
আকুল হয়ে মন। সত্যিই শেষের দিন কি ভয়ঙ্কর!
"চা খাবে একটু"।
নিশীথ এসে পাশে বসেছে কখন টের পায়নি মিনু। ডুবে
ছিলো অন্য ভাবনায়। নিশীথকে দেখে বুকের ভিতর তীব্র মোচড় অনুভব করে। সারাদিনের
সমস্ত কান্না বুঝি একযোগে বের হতে চায়। এই প্রথম সশব্দে কেঁদে ওঠে মিনু। মনের
অযুত যন্ত্রণার স্তবক গুলি ভাষা পেয়েছে এতক্ষনে। মিনুর পিঠে হাত রাখে নিশীথ।
সমবেদনার অকৃত্রিম স্পর্শ। দুহাতে মুখ ঢাকে মিনু, দু চোখের ধারাপাত হয়ে ওঠে স্রোতস্বিনী। নিশীথ
জানে কাছের মানুষ পাশে এলে সংযমের গ্রন্থি শিথিল হয়। " তুমি চোখে মুখে জল
দিয়ে মুখে কিছু দেবে চলো " তিতির আসে। চোখে মুখে জল দেয় নিশীথ। চৈত্রের
ভীষণ দাবদাহ। তাছাড়া কোন সকালে রওনা দিয়েছে। গঙ্গার ঠাণ্ডা জলের স্পর্শে কিছুটা
স্বস্তি পায় নিশীথ। মিনু যেতে রাজি না হওয়ায় নিশীথকেই জোর করে নিয়ে যায়
তিতির। মেয়ের উপর জোর চলে না, তাই সামান্য কিছু মুখে তুলতে রাজি না হয়ে উপায়
থাকে না নিশীথের।
কালো ধোঁয়ার শীর্ণ রেখা টুকু গঙ্গার বুকে
ভাসিয়ে রেখে নিভে গেছে সেই চিতা। সার বেঁধে ফিরে যাচ্ছে শ্মশান যাত্রীরা। আপনজন
নিয়েছে চির বিদায়। বিরহভারে মাথা নত হয়ে এসেছে সবার।
" বড়দি"
চমকে ওঠে মিনু। শমীক এসেছে! এযেন অপ্রত্যাশিত
বিশ্বয়। আজ এক বছর পরে শমীক দাঁড়িয়ে মিনুর সামনে। চেহারায় সেই পরিপাটি ভাবটা
আর নেই। একাকীত্বের কালি দু চোখের পাতায়। মুখে ধরে রাখা হাসি কৃত্রিম। নিজেকে
আড়াল করবার প্রয়াস। সে কি অতো সহজ! মনের নিদারুণ যন্ত্রণার ভার সামান্য হাসিতে
আড়াল করা যায়! ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে গেলে তার যন্ত্রণা কি আড়ালে থাকে! মনে
মনে কুণ্ঠিত বোধ করে মিনু। বিনু চলে যাবার পর একবারও খবর নেয়নি শীমিকের। অবশ্য
নিশীথ খোঁজ খবর নিয়েছে। মিনু যেনো ইচ্ছে করেই নেয়নি। একবার ফোন করা কি উচিত ছিল
না মিনুর! হয়তো ছিলো। " নিশীথদার থেকেই সংবাদটা পেয়েছি " বলে শমীক।
" বসো" মিনু বসতে বলে শমীককে।
মিনুর থেকে কিছুটা ব্যবধান বজায় রেখে শমীক বসে। দুজনেই চুপ থাকে। হঠাৎ করেই শুরু
হয় কথার অনটন। তৃতীয় জনের অনুপস্থিতি নীরবতার অদৃশ্য প্রাচীর খাঁড়া করে। দু
জনের মাঝে সামান্য দূরত্ব হয়ে ওঠে অসীম। সময়ের মুহূর্ত গুলি নীরবতায় সায় দিয়ে
এগিয়ে চলে নিশ্চুপে। চৈতালি হওয়ায় ছোটো ছোটো উর্মিমালা আছড়ে পরে গঙ্গার ঘাটের
সিঁড়িতে। ঢেউ ভাঙ্গার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ মুখরিত করতে চায় কথাহীন সময়ের খণ্ড
গুলিকে। শমীককে বলবার মতো কিছু কথা খুঁজে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে মিনু। বিনুর চলে
যাওয়ার পর কেমন আছে শমীক সে কথা মিনু জানে, তাই কেমন আছো শমীক? এই প্রশ্নটি মিনুর দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গেই নীরবে
আত্মগোপন করে বাতাসে। " বাবা মা কেমন আছেন শমীক?" জিজ্ঞাসা করে মিনু।
" চলছে" শমীককের
ছোট্ট উত্তর। ফুরিয়ে আসে কথা। সময় আবার নিরবতার সঙ্গী হয়ে এগিয়ে চলে নিঃশব্দে।
দুজনেই টের পায় দুজনের মনের গতি। শুনতে পায় অন্যের না বলা কথা। বিনুর কথা বেদনার
বেহাগ শোনায় নীরবে, ভিজে ওঠে মন। " আপনি বসুন বড়দি। আমি ওই
দিকে যাই"। উঠে দাঁড়ায় শমীক। হাঁটা দেয় চুল্লির সামনের চাতালের দিকে। হাতে
রয়েছে কাগজের মোড়কে বাঁধা ফুলের মালা। অসীমার প্রতি শ্রদ্ধা শমীকের, বিনুরও। শমীকের হেঁটে
চলা পথের দিকে চেয়ে আনমনা হয় মিনু। বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন হয়ে আসে। শমীক কে কেমন
অচেনা লাগে আজ। সম্পর্কের গ্রন্থিও কি শিথিল? অস্বাভাবিক তো নয়। বড়ো অদ্ভুত এই সম্পর্কের
রেশ! যতদিন বিনু ছিলো শমীক মিনুর আত্মীয়, কাছের জন। আর আজ বিনু নেই। সম্পর্কটাও বুঝি অতীত
অধ্যায়ের পাতায়!
আকাশে ইতিউতি ভ্রাম্যমাণ কালো মেঘের স্তূপ।
হাওয়ায় ডানা মেলে তারা ভেসে চলে পশ্চিম আকাশের দিকে। ধীরে ধীরে গড়ে তোলে মেঘের
মিনার। মাঝে মাঝে আকাশ চেরা বিদ্যুতের ক্ষীণ রেখা জানান দেয় কালবৈশাখীর আগমন।
বেশ কিছুক্ষন হোলো অসীমার দাহ শুরু হয়েছে। ঘাটের
সিঁড়িতে বসেই চেয়েছিলো মিনু চুল্লির চিমনির দিকে।আকাশ ছোঁয়া সেই চিমনির
মুখদিয়ে বের হয়ে আসছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। গঙ্গার দামাল বাতাস এসে ছিনিয়ে নিয়ে
যায়, প্রবল রোষে ছিন্ন ভিন্ন
করে দেয় সেই ধোঁয়ার দলা গুলিকে। অসীমা ছড়িয়ে পরে এ বিশ্ব চরাচরের সর্বত্র।
নিশীথ এসে ডেকে নিয়ে যায় মিনুকে। চুল্লির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে সবাই।
চাতালে রয়েছে তিতির। অসীমার পিন্ডদান ও মুখাগ্নির পর অপরিষ্কার হয়েছে চাতালের কিছুটা
জায়গাটা। তাছাড়া সে খানেই ছড়িয়ে রয়েছে ফুল, মালা। সমস্ত কিছু একসঙ্গে নিয়ে গঙ্গায় ভাসিয়ে
দেবে তিতির। শমীক দাঁড়িয়ে রয়েছে একপাশে। শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে অসীমাকে, এবার বিদায় নেবে হয়তো।
হটাৎ চিৎকার করে ওঠে তিতির " এই দেখো মা ছোটো মাসী, এখানেই ছিলো এতক্ষন
"। তিতিরের চিৎকারে চমকে ওঠে সকলে। বিনুকে প্রথম আবিষ্কারের ঘোরে বিহ্বল
তিতির। অসীমার বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে চেয়ে থেকে আনমনা ছিলো মিনু। তিতিরের চিৎকার
যেনো ধাক্কা মারে তাকে। তাকায় চাতালের দিকে। বিনু! বিনু আসবে কোথা থেকে? ততক্ষনে সকলে জড়ো
হয়েছে তিতিরের পাশে। হ্যাঁ, ওই তো বিনু। সেই হাসি মুখ। পায়ে পায়ে এগিয়ে
আসে মিনু। তিতিরের হাতে রয়েছে বিনুর ছবি। কান্নায় ভেঙে পরে মিনু, " তুই ছিলি বিনু..."।
বিনুকে নিয়ে বড়ো অদ্ভুত পাগলামো ছিলো শমীকের, স্ত্রীর প্রতি নিখাদ ভালোবাসার এমন বহিঃপ্রকাশ
খুবই কম দেখেছে মিনু। বিনুর জন্মদিনে প্রতিবছর খবরের কাগজে ছবি ছাপিয়ে বীনুকে
শুভেচ্ছা জানাতো শমীক। বিয়ের পর থেকে এই পাগলামির ছেদ পড়েনি কখনো। বিনুর ছবি
থাকা সেই কাগজ আজ ফুলের মোড়ক হয়ে এসেছে। তিতিরের হাত থেকে কাগজের টুকরো নিজের
হাতে নিতে যায় মিনু। কালবৈশাখী ঝড় ছিনিয়ে নেয় সেই কাগজ। উড়নচণ্ডী বাতাসের
খেয়ালে আকাশের গায়ে লুটোপুটি খেয়ে ভেসে চলে বিনু । অসীমার পথে পারি দেয়
কালবৈশাখীর টানে। পশ্চিমের ওই মেঘের মিনারের দিকে ভেসে চলে বিনু, অসীমাও। পাগল হয়েছে
বাতাস। ঝড়ের মধ্যে পথে নামে শমীক। এগিয়ে চলে ধীর ধীরে।
বেশ ভালো লাগল।
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন