শ্রীযুক্ত অমর তালুকদার!
বাবার নামের পরিচিতি বড্ডো বেখাপ্পা লাগতো আমার! জীবনভর বয়ে বেড়িয়েছেন একটা
ভারিক্কি পদবি। আদতে তালুকদারির মধ্যে ছিল, সবেধন নীলমণি একটা অ্যাসবেষ্টসের পুরানো কোঠাবাড়ি। সেটাও ঠাকুরদার আমলের, সখি ধরো ধরো অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল।
তার নামের মাহাত্ম্য?
স্থায়িত্ব পেয়েছিল আটচল্লিশ বছর। পেশায় বিড়ি কোম্পানীর ম্যানেজার ছিলেন তো। দৌড়ঝাঁপ করতেন বছরভরই। তবু হা-অন্ন ঘোচাতে
পারেননি জীবদ্দশায়। পুরুলিয়া-ঝালদা থেকে শুরু করে, ঝাড়খন্ডের বহু দেহাতি গ্রাম তার নখদর্পনে ছিল। পালাকরে বিচরণ করতেন শ্রমিকদের
বাড়ি বাড়ি। বিড়ির কাঁচামাল কেঁন্দু-পাতা, তামাক, আর সুতো পৌঁছে দেওয়াই ছিল তাঁর কাজ।
কাজের খাতিরেই, বহু শ্রমিক পরিবারের আপনজন
হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁরও বিশেষ
আস্থা ভাজন ছিল চন্দ্রানী। তেওড়া কিংবা
আড়াআড়ি, পাতা কাটায় বিশেষ পারদর্শী হাত। তার কোলেই তো মাথা রেখে ইহলোক ছাড়েন বাবা। শীতের ঝালদায় হঠাৎই হৃদযন্ত্রের বেইমানি।
শেষ সময়ের ল্যাটানো কথায়, কি সব বলে গিয়েছিলেন, কাঁচিধরা মেয়েটার হাত ধরে।
আমি তখন হলদিয়ায়, বি-টেক পড়ছি। কলেজের হাওয়াতে উড়ে আবেগি কোকুন, অষ্টেপৃষ্ঠে সহপাঠিনীতে জড়াতে চাইছে মন। তসরের লাটাই যেমন।
বাবা মারা যেতেই, স্বপ্ন শেষ। কল্পনার সৌধে ফাটল ধরালো আর্থিক আঁধার। মাঝ মাঠে ধুঁকতে
বসলো বি-টেকের ভবিষ্যত। স্বপ্নের প্রেম। সব, সবই। কাজ খোঁজার তাগিদ পড়লো এখন। ড্রপ হয়ে গেল ফোর্থ সেমিস্টার। কাজের ধান্ধায়
হন্যে হয়ে ঘুরছি এদিক সেদিকে। তখনই আর্জেন্ট ফোন এলো কলেজ থেকে, মানি-অর্ডার এসেছে। গিয়ে দেখি অ্যাকনলেজমেন্টে ঘিঞ্জিপিটি করে, মেয়েলি হাতে চারটি বাক্য লেখা।
"কাকাবাবুর অনুরোধেই তোমার খবর রাখি। জানি সেমিস্টার ফিজ পড়েছে বাকি।
আমার মহিলা গ্রুপের ধার করা টাকাটা নিও। পরীক্ষা দিও।
ইতি চন্দ্রানী। “
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন