বাংলার লৌকিক দেব দেবী
কথায় বলে, যেখানে মানুষের অস্তিত্ব সঙ্কটে ভোগে, সেখানে জন্ম নেয় নতুন বিশ্বাস। সেই নববিশ্বাসের ভ্রূণ থেকেই উৎপত্তি ঘটে স্থানীয় লোককথার, এবং সেই লোককথার নিমিত্তই কল্পিত হয় নানান দেবদেবী। বাংলায় বিচিত্র নামের দেবদেবী পূজিত হচ্ছে, যার সঠিক পরিসংখ্যান নির্ণয় অসম্ভব। রাঢ় বাংলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে হাজার হাজার মানুষের দ্বারা এইসব দেবদেবীরা পূজা পাচ্ছেন, যাদের নাম শাস্ত্রে বা ইতিহাসে উল্লেখ নেই। লৌকিক দেবদেবী সমৃদ্ধ এই লৌকিক ধর্ম সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ধ্যান ধারণার প্রতিমূর্তি।
সময়ের প্রবাহে বর্তমানে যান্ত্রিক নগরায়ণের প্রভাবে সেইসব লৌকিক পুজা-আর্চ্চা, আচার-অনুষ্ঠান ক্রমান্বয়ে লুপ্ত বা অনেকটাই চাপা পড়ে গেলেও পল্লীগ্রামের এইসব নানান ধরনের আচারানুষ্ঠান বাংলার বিভিন্ন জায়গায় হয়তো এখনও প্রচলিত আছে। এই প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানই বিচিত্র শিল্পসুষমায় এবং জীবনের সুষম আনন্দে মণ্ডিত। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, তার কোনটিতেই সাধারণত কোনও ব্রাহ্মণ বা পুরোহিতের প্রয়োজন হতো না বা এখনও হয় না। জাতিবর্ণ নির্বিশেষে সবাই এসব পূজানুষ্ঠানের অধিকারী। এসব গ্রাম্য পূজাচারকে কেন্দ্র করেই বাঙালির ধর্মকর্মময় জীবনের অনেক সৃষ্টির আনন্দ ও উদ্যোগ, শিল্পময় জীবনের অনেক মাধুর্য ও সৌন্দর্য, এসব আচারানুষ্ঠানের অনেক আবহ ও উপচার আমাদের ‘ভদ্র’স্তরের আর্য-ব্রাহ্মণ্য ধর্মকর্মের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে মিশে গেছে। অধ্যাপক নীহাররঞ্জন রায়ের কথায়,
“এই সব গ্রাম্য দেবতাদের প্রতি আর্য-ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি খুব শ্রদ্ধিতচিত্ত ছিল না। ব্রাহ্মণ্য বিধানে গ্রাম্য দেবতার পূজা নিষিদ্ধ; মনু তো বারবার এই সব দেবতার পূজারীদের পতিতই বলিয়াছেন। কিন্তু কোনও বিধান, কোনও বিধিনিষেধই ইঁহাদের পূজা ঠেকাইয়া রাখিতে আজও পারে না, আগেও পারে নাই। ইঁহাদের কেহ কেহ ক্রমশ ধীরে ধীরে ব্রাহ্মণ্য সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত হইয়া ব্রাহ্মণ্য ধর্মেকর্মে ঢুকিয়া পড়িয়াছেন, এমনও বিচিত্র নয়।”
বলা বাহুল্য, গ্রামে যে গ্রামবাসীদের নিজস্ব লৌকিক দেবতা থাকতো তার প্রাচীনত্ব নিয়ে সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। ‘অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থেও গ্রামবাসীদের নিজের দেবতারূপে গ্রাম্য দেবতার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন-
“গ্রামদেব-বৃষা বা অনির্দশাহা বা ধেনুরুক্ষাণো গোবৃষাশ্চাদণ্ড্যাঃ।
অর্থাৎ, “গ্রামদেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত বৃষ, বা দশ দিন অতিক্রান্ত হয়নি এমন প্রসূতা গাভী, বৃদ্ধ বৃষভ এবং গোবৃষভ (প্রজননের জন্য নির্দিষ্ট ষাঁড়) উপরিউক্ত অপরাধ (অন্যের ক্ষেতে গিয়ে শস্য ভক্ষণ) করলে মালিকের কোনও দণ্ড হবে না।”
অর্থশাস্ত্রে উল্লেখকৃত সেই-সব গ্রাম্য দেবতার সম্পত্তি গ্রামের বিশিষ্ট লোকেদের দ্বারা পরিচালিত হতো। সে সময় তিথি বিশেষে উপদেবতার পূজাও প্রচলিত ছিল। দেবতার কোপই মহামারী, দুর্ভিক্ষ ও সংক্রামক ব্যাধির হেতু বলে লোকের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। এসব ইঙ্গিত অর্থশাস্ত্রে বিরল নয়। এখানে উল্লেখ্য, গ্রামের উপান্তে বসতির বাইরে যে-সব জায়গায় এসব পূজানুষ্ঠান হতো এবং এখনও হয় সেসব পূজাস্থানকে আশ্রয় করে বাংলার নানা জায়গায় নানা-তীর্থস্থান গড়ে উঠেছে। এ ধরনের গ্রাম্য লৌকিক দেবদেবীর পূজার কিছু কিছু বিবরণ বাঙালির প্রাচীনতম সাহিত্যে বিবৃত হয়ে আছে। যেমন, বটগাছের পূজা সম্বন্ধে কবি গোবর্ধন-আচার্যের একটি শ্লেষাত্মক শ্লোক আছে এভাবে–
“ত্বয়ি কুগ্রাম বটদ্রুম বৈশ্রবণো বসতু বা লক্ষ্মৌঃ।
পামরকুঠারপাতাৎ কাসরশিরসৈব তে রক্ষা।।”
অর্থাৎ, “হে কুগ্রামের বটগাছ, তোমার মধ্যে বৈশ্রবণের (কুবের) অথবা লক্ষ্মীর অধিষ্ঠান থাকুক বা না থাকুক, মূর্খ গ্রাম্য লোকের কুঠারাঘাত হইতে তোমাকে রক্ষা করে শুধু মহিষের শৃঙ্গ তাড়না।”
এছাড়া, অধ্যাপক নীহাররঞ্জনকৃত উদ্ধৃতিতে ‘সদুক্তিকর্ণামৃতে’র একটি শ্লোকে গ্রাম্য লৌকিক দেবদেবীর পূজার একটি ভালো বিবরণ পাওয়া যায়–
“তৈস্তৈর্জীরোপহারৈগিরি কুহরশিলা সংশ্রয়ামর্চয়িত্বা
দেবীং কান্তারদুর্গাং রুধিরমুপতরু ক্ষেত্রপালায় দত্বা।
তুন্বীবীণা বিনোদ ব্যবহৃত সরকামহ্নি জীর্ণে পুরাণীং
হালাং মালুরকৌষের্যুবতি সহচরা বর্বরাঃ শীলয়ন্তি।।”
অর্থাৎ, “বর্বর (গ্রাম্যলোকেরা) নানা জীববলি দিয়া পাথরের পূজা করে, রক্ত দিয়া কান্তারদুর্গার পূজা করে, গাছতলায় ক্ষেত্রপালের পূজা করে, এবং দিনের শেষে তাহাদের যুবতী সহচরীদের লইয়া তুন্বীবীণা বাজাইয়া নাচগান করিতে করিতে বেলের খোলায় মদ্যপান করিয়া আনন্দে মত্ত হয়।”
লৌকিক ধর্মোৎসবে এই ধরনের নৃত্যগীতসহ সামাজিক ধর্মানুষ্ঠানের বিবরণ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ও প্রাচীন বৌদ্ধ সংযুত্তনিকায়-গ্রন্থে জানা যায়। তবে, প্রাচীনকাল থেকে এগুলোর প্রচলন থাকলেও আর্য ব্রাহ্মণ ও বৌদ্ধ উচ্চকোটির লোকেরা বোধ হয় এই ধরনের সমাজোৎসব খুব একটা পছন্দ করতেন না, হয়তো সেজন্যই সম্রাট অশোক এইরকম গ্রাম্য এবং প্রথাবহির্ভুত সমাজোৎসবের বিরুদ্ধে অনুশাসন প্রচার করেছিলেন। কামন্দকীয় নীতিসারেও দেখা যায়, কামন্দক বলছেন–
“যাত্রোৎসবসমাজেষু জনসম্বাধশালিনঃ।
প্রদেশান্ নাবগাহেত নাতিবেলং চ সম্পতেৎ।।”
অর্থাৎ, “যাত্রা, উৎসব, সমাজ– এসব স্থানে বহু লোকসমাগম হয়, তাই রাজা এসব উৎসবাদিতে একা তো যাবেনই না, পরিমিত লোক নিয়েও যাবেন না, এবং যে সময় তাঁর সেখানে যাওয়া নির্ধারিত হয়েছে তার পরে একেবারেই যাবেন না।”
তবে, কোনও রাজকীয় অনুশাসনই লৌকিক ধর্মের এই লৌকিক প্রকাশকে চেপে রাখতে পারেনি; জনসাধারণের ধর্মোৎসব ক্রমশ বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য সমাজে স্বীকৃতি লাভ করেছিল, এবং তারই ফলে নানা রূপে, নানা রঙে লৌকিক ধর্মোৎসবের প্রচলন আজও অব্যাহত। বস্তুত, মুলধারার দেবোপসনার সমান্তরালেই লোকায়ত দেবদেবীর পুজার্চনার চল ছিল, আছে, থাকবে।
১. ইর্গুনাথঃ
'পুরু' শব্দের অর্থ শক্ত এবং 'ইল্যা' শব্দের অর্থ মাটি। দুইয়ে মিলে হয় 'পুরুল্যা' বা পুরুলিয়া। 'শক্ত মাটির দেশ' পুরুলিয়ারই একটি প্রায় অখ্যাত একটি গ্রাম দেউলি। সমস্ত অঞ্চলটা পাহাড়ি জঙ্গলময়, মাঝে মাঝে এদিকে সেদিকে ছড়ানো ছিটানো, ভাঙ্গা ভাঙ্গা মন্দির। বাংলার মন্দির ও টেরাকোটা স্থাপত্য নিয়ে গবেষণার পথিকৃৎ ডেভিড ম্যাককাচন ষাটের দশকে এই দেউলি গ্রামেরই একপ্রান্তে খোঁজ পান তিনটি ভগ্নপ্রায় মন্দিরের। তাঁরই একটি মন্দিরে সেখানকার স্থানীয়রা নিয়মিত পূজাও দেন, মন্দিরের পুরোহিত নিম্নশ্রেণীর আদিবাসী হিন্দু। মন্দিরের মুর্তিটি কালো রঙের, উচ্চতা প্রায় তিনফুট। ম্যাককাচন সাহেব মন্দিরের ভেতর মুর্তিটা ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। আর ঠিক তখনই ওনার চোখে পড়লো মুর্তির বেদীর উপর একটি হরিণের ছবি খোদাই করা। দেখামাত্রই সন্দেহ হল ম্যাককাচন সাহেবের। স্থানীয়দের কাছে খোঁজখবর করে জানতে পারলেন, এই দেবতা ইর্গুনাথ নামে বহু বছর ধরে পূজা পেয়ে এসেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ম্যাককাচনের আগমনের প্রায় শতবর্ষ আগেই প্রত্নতাত্ত্বিক জোসেফ দাভিদিচ বেগলারও দেউলি গ্রামের এই মন্দির সম্পর্কে তাঁর লেখায় লিখে গিয়েছিলেন। অবশ্য তিনি পিঠোপিঠি দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচটি মন্দিরের কথা বলে গিয়েছিলেন, যার দুটি ম্যাককাচনের আগমনের পুর্বেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিলো। ১৮৭২-৭৩ সাল নাগাদ ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইণ্ডিয়া’-র পক্ষ থেকে গবেষণার কাজে যখন এই অঞ্চলে এসেছিলেন, তখন তিনি প্রখ্যাত অ্যালেক্সান্ডার কানিংহ্যামের প্রধান সহকারী। দেউলি গ্রামের এই মন্দির ও মুর্তি সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা কালীপ্রসাদ জয়সোয়াল রিসার্চ ইন্সটিটিউট থেকে প্রকাশিত ‘THE ANTIQUARIAN REMAINS OF BIHAR’ বইতে প্রকাশিত হয়-
“The tower had completely collapsed and in the shrine Beglar could see a jain image 3’ high, with figure of an antelope on Its pedestal and worshipped by the Local people by name of Arnanatha…”
অর্ণনাথ? তাহলে ম্যাককাচন যে মূর্তিকে ইর্গুনাথ বলে চিনলেন সেটার নাম কি? একই জায়গায়, একই মন্দিরে মাত্র ১০০ বছরের ব্যবধানে দুজন মানুষ কীভাবে একই দেবতার দু-দুটো নাম শুনলেন? দুজনে আদৌ কি একই দেবতা? অথচ, গঠনের দিক থেকে জে.ডি. বেডলারের বর্ণনার সাথে এই মূর্তির অদভুত মিল। একটু ব্যাপারটা তদারকি করতেই সমস্ত ব্যাপারটা পরিষ্কার হল ম্যাককাচনের কাছে। একশো বছর আগের দেবতা অর্ণনাথই লোকমুখে পরিবর্তিত হতে হতে এখন ইর্গুনাথ নামে পূজা পেয়ে আসছেন।
এখন প্রশ্ন উঠবে, কে এই ইর্গুনাথ? বেগলারের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি একজন জৈন দেবতা, সত্যিই কি তাই? প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের তাকাতে হবে সুদূর ইতিহাসের দিকে।
এই পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান বা ‘রাঢ় অঞ্চল’-এ আনুমানিক খ্রীঃপূঃ দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শতকের মধ্যে জৈন তীর্থংকর মহাবীড় এসেছিলেন জৈন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। এর নিদর্শন হিসেবে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বিচিন্ন জায়গায় এমনকি কংসাবতীর উপকুল পর্যন্ত প্রাক-মুসলিম যুগের জৈনদের তৈরী করা ভগ্নপ্রায় মঠ-মন্দির পাওয়া গেছে। তারপর পাল যুগে বৌদ্ধ ধর্মের বাড়বাড়ন্তের কারণে জৈন ধর্মের জনপ্রিয়তা লোপ পেতে থাকে। ফলস্বরূপ, কোণঠাসা জৈন তীর্থংকররা ধর্মপ্রচারের কেন্দ্র হিসেবে বানানো মঠ-মন্দিরগুলি ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে তাঁরা পশ্চিম সীমান্তে শরাক সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ডেভিড ম্যাককাচন মনে করেন, ইর্গুনাথের মন্দিরটিও আসলে প্রাচীনকালে পরিত্যক্ত কোনো জৈন মন্দির এবং খুব সম্ভবত মুর্তিটিও আসলে কোনো জৈন তীর্থংকরেরই মুর্তি। জৈনধর্মের মোট ২৪ জন তীর্থংকরকে শনাক্ত করা যায় একটি বিশেষ চিহ্ন বা প্রতীক দিয়ে, একজন তীর্থংকরের পরিচয় স্বরূপ এই প্রতীক অন্য তীর্থংকরের থেকে আলাদা হয়। জৈন আভিধানকারিক হেমচন্দ্রের মতে-
“বৃষ গজোশ্ব প্লবগঃ ক্রৌঞ্চজং স্বস্তীকঃ শশী।
মকরঃ শ্রীবৎস খড়্গী মহিষঃ শূকরস্তথা।।
শ্বেনোবজ্রং মৃগশ্ছাগৌ নন্দাবর্তো ঘটোহপি চ।
কূর্মো নীলোৎপলং শঙ্খঃ ফনীসিংহোহতাংধ্বজা।।”
অর্থাৎ, ২৪ জন তীর্থংকরের প্রতীকগুলো হল, যথাক্রমে- বৃষ, গজ, অশ্ব, প্লবগ(বানর), ক্রৌঞ্চ, অজ(পদ্ম), স্বস্তীক, শশী, মকর, শ্রীবৎস, খড়্গী(গন্ডার), মহিষ, শূকর, শ্যেন, বজ্র, মৃগ, ছাগল, নন্দাবর্ত, ঘট, কূর্ম, নীলোৎপল, শঙ্খ, ফণী ও সিংহ।
প্রতীকগুলো দেখতে দেখতে টনক নড়লো ম্যাককাচন সাহেবের। ইর্গুনাথের মন্দিরে মূর্তির বেদিতে হরিণের প্রতিরূপ খোদাই করা আছে, তা তিনি দেখেছেন। আর হেমচন্দ্রের শ্লোক অনুসারে, ১৬তম তীর্থংকরের প্রতীক হল হরিণ বা মৃগ। অর্থাৎ, জৈনদের ১৬ তম তীর্থংকর শান্তিনাথই লোকমুখে অর্ণনাথ হয়ে অবশেষে ইর্গুনাথ হিসেবে মন্দিরে বিরাজমান। গবেষণা শেষে ১৯৬১ সালে পুরুলিয়ার ‘ডিস্ট্রিক্ট সেন্সাস হ্যাণ্ডবুক’-এ ম্যাককাচন লিখলেন-
“…It is a gracefully proportioned Jain Tirthankar with a richly carved stela, much superior in work-manship to any of the sculpture at Pakbirra; According to Beglar, the symbol on the pedestal (Now burled) was an antelope thus indicating that the image was probably of Santinatha…”
চিত্রঃ- ইর্গুনাথ, সৌজন্যেঃ- মৃগাঙ্ক চক্রবর্তী
ইর্গুনাথের কাজে প্রধানত বন্ধ্যা মহিলারা সন্তান কামনার্থে পূজা দিতে আসে। যারা মন্দিরে পূজা দেবে, তাদের জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তির ঠিক আগের দিন নানারকম নিয়ম নিষ্ঠা মেনে শুদ্দাচারে থাকতে হয়। সংক্রান্তির দিন সকাল সকাল মহিলারা মন্দির লাগোয়া হারুণপুকুরে স্নান করে, পুকুর হাতড়াতে থাকে। উদ্দেশ্য একটাই- পুকুর হাতড়ে হাতে পাথর উঠলে নাকি ছেলে জন্মাবে; আর পাথর ছাড়া অন্য কিছু উঠলে মেয়ে জন্মাবে। মহিলারা স্নান সেরে, পুকুর হাতড়ে হাতে যা উঠে আসে, সেটা নিয়ে মন্দিরে এসে পূজারীর সামনে মানত করে, মহিলাদের নামে পুজারী নিজেই ইর্গুনাথের পূজা দিয়ে দেন। মানত থাকলে অনেকসময় পাঠাবলিও হতে দেখা যায়।
২. তিস্তাবুড়িঃ
অশীতিপর; পরনে ধবধবে সাদা শাড়ি; মাথায় শনপাটের মত ধবধবে সাদাচুল; বৃদ্ধার নুইয়ে পড়া শরীরে হাতে লাঠি; ফোকলা দাঁতে সবসময় একটা হালকা হাসি খেলে যাচ্ছে – উত্তরবঙ্গের লোকদেবী তিস্তাবুড়িকে এভাবেই কল্পনা করা হয়ে থাকে।
নদীমাতৃক বাংলায় নদীকে দেবীর সাথে তুলনা করে তাঁর পূজার চল বহুকাল পুর্ব থেকেই বর্তমান। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লাদশমী তিথিতে দেবী গঙ্গার পূজা তারই সাক্ষ্য দেয়। অবশ্য, তিস্তাবুড়ি দেবী গঙ্গার মতো অতটা প্রসিদ্ধ নন, এবং তাঁর পুজাও উত্তরবঙ্গের গুটিকয় অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তিস্তাবুড়ি পূজার প্রাচীনত্ব সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে, ডঃ বুকানন হ্যামিল্টন ১৮০৯ সালে তাঁর ‘অ্যাকাউন্ট অফ রংপুর বইতে উল্লেখ করেছেন যে, ফকিরগঞ্জ অঞ্চলের লোকদেবতা হলেন তিস্তা। কিন্তু, সমস্ত মিথকে সরিয়ে ভাবতে গেলে, তিস্তার বন্যার কথাই উঠে আসবে। তিস্তার ভয়ঙ্কর বন্যায় প্রতি বছর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হতো। সেটার সঙ্গেই জুড়ে যায় নদীমাতৃক পূজার চল। দুটোর মিলমিশ হয়েই তিস্তা নদীকে উৎসর্গ করে সম্ভবত তিস্তাবুড়ির পূজার চল হয়। প্রধানত মেখলিগঞ্জের নিজতরফ, নালারটারী; হলদিবাড়ীর পয়ামারী, বোয়ালমারী, ডাঙ্গাপাড়া, ফিরিঙ্গিপাড়া; বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মানিকগঞ্জ ইত্যাদি অঞ্চলে তিস্তাবুড়ির পূজার চল বেশি।
তিস্তাবুড়ির পূজা মুলত মেয়েরাই করে। উত্তরবঙ্গের তিস্তাবুড়ির সাথে মেচেনি খেলা অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। যিনি পূজার প্রধান, তাঁকে বলা হয় মারেয়ানী। মারেয়ানী ছাড়াও দলে অন্যান্য ব্রতিনীরাও থাকে। বৈশাখের সময় মেয়েরা মারেয়ানীকে সঙ্গে করে বাড়িবাড়ি কিংবা হাটবাজারে ‘মাগন’ বা দান সংগ্রহ করতে যায়। মারেয়ানীর এক হাতে থেকে কালো ছাতা, তাতে সাদা পিটুলি দিয়ে আলপনা আঁকা ও শোলা-ফুল দিয়ে সাজানো। অন্য হাতে থেক ফুলের সাজি, তার মধ্যে বসানো থাকে একখণ্ড পাথর আর তিস্তা নদীর মাটি দিয়ে তিস্তাবুড়িকে কল্পনা করে বানানো মাটির দলার মুর্তি। মুর্তিটিকে দুলের সাজিতে সিঁদুরের ফোটা দিতে, দই মাখানো আতপ চাল আর ফুলের সঙ্গে রাখা হয়।
“মুঠি মুঠি মোর বথুয়া শাক
ছনে মুটি মোড় তিতলি পাতে
ঐনা মোরকে হে টারির চ্যাংরা
রসিয়া খোচিয়া ধরিছে মোড়
গায়ের পাছরা।”
এই গান গাইতে গাইতে মেয়েরা মাগন সংগ্রহ করে ও হাটবাজারে, গাঁয়ে-গঞ্জে চষে বেরায়। বাসা বাড়িতে মাগন সংগ্রহ করার পদ্ধতিটাও সুন্দর। মারেয়ানী আর তাঁর সঙ্গিনীরা বাসাবাড়ির উঠানে এসে উলু দিয়ে গান ধরে-
“আসিয়া নখমী পাও মোর দুয়ারে দিলেক পাও,
বড়বাড়ির পিড়াখান পাইনো হামেরা,
শুনো মোর সাউদানী হে।”
গান শুনে ‘সাউদানী’ বা বাড়ির গৃহিণী তুলসীতলার সামনের মাটির দাওয়া জল দিয়ে লেপে সেই জায়গায় একটা পিঁড়ি পেতে দেয় তাঁদের উদ্দেশ্যে। মারেয়ানী ছাতাটা পিঁড়ির ওপর রাখে। তারপর, তালি বাজিয়ে গান গাওয়া শুরু করে। এই গানের সঙ্গে একটা বিশেষ রকম নাচেরু চল আছে। মাটির ফাওয়া জল ঢেলে পিচ্ছিল করা হয়। সেই পিচ্ছিল আদামাটির ওপর কোমড়ে হাত দিয়ে মেয়েরা নাচতে থাকে। এই নাচের সাথে বিহু নাচের অনেক মিল। নাচ গানের শেষে চাল, ডাল, সবজি, পয়সা মাগন পায় ব্রতিনীরা। বাটি ছেড়ে যাওয়ার আগে ওরা বাড়ির বউকে ফুল, সিঁদুর দিয়ে আশীর্বাদ করে যায়।
চিত্রঃ- তিস্তাবুড়ি, সৌজন্যেঃ- মৃগাঙ্ক চক্রবর্তী
বৈশাখের সংক্রান্তিতে মারেয়ানী আর অন্যান্য ব্রতিনীরা তিস্তাতে যায় স্নান করতে, স্নানের সাথে জলখেলাও চলে। হাঁটু জলে মারেয়ানী বৃত্তাকারে ঘিরে ব্রতিনীরা জল ছিটিয়ে নেচে নেচে গান করে। এর পাশাপাশি দুধ, দই, কলা, ফলমূল দিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে একটা ভেলায় রেখে ভাসিয়ে দেয় নদীর বুকে।
স্নান সেড়ে মারেয়ানীকে নিয়ে অন্যান্য ব্রতিনীরা মারেয়ানীর বাসায় যায়, বাসার উঠানে পূর্বমুখী চালাঘড় বানানো হয় খড় দিয়ে। সেখানে তিস্তাবুড়ির মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা করা হয়। এই পুজায় যিনি পুরোহিত হন, তাঁকে ডাকা হয় দেওধাঁ নামে। দেওধাঁ পূজা শুরু করেন আবাহন মন্ত্র দিয়ে-
“ধরতি আসন ধরতি বসন,
এই ধরতিতে বসি যাবো,
তিশশাল কুটি দেবগণ।।”
এই পূজার সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত মেছেনি ব্রতগান-
“তিস্তাবুড়ির নামান গেহচে
বড়য় হাউসালি,
আলন্দে বড়িয়া নেহগে
হুমার পাঞ্চ বহিনী।।”
তিস্তাদেবীকে উত্তরবঙ্গে ‘মেছেনি’ সম্বোধন করা হয়, সেই থেকে মেছেনি গানের নামটা এসেছে বলে অনেকে মনে করে।
৩. ক্ষেত্রপালঃ
“বহু দেব বহু মঠ না যায় কথন।
নীচ জাতি গৃহে দেখ ধর্ম সনাতন।।
ক্ষেত্রপাল মহাকাল প্রভৃতি দেবতা।
যাহার যেরূপ ভক্তি সেরূপ গঠিতা।।”
অষ্টাদশ শতকের প্রথম ভাগে উত্তর ভারতের দশনামী শৈব সন্ন্যাসীরা যখন বাংলার তারকেশ্বরে আসেন, সেই সময় বাংলায় প্রচলিত নানান লৌকিক দেব-দেবীর কথা তারা জানতে পারেন। সেই সব লৌকিক দেবতাদের কথা তারা ‘তারকেশ্বর শিবতত্ত্ব’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন। ঐ গ্রন্থেই বাংলার লৌকিক দেবতা হিসেবে ক্ষেত্রপালের কথাও উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন যুগের সদূক্তিকর্ণামৃত নামক সংস্কৃত কোষগ্রন্থে এবং কোনও কোনও মঙ্গলকাব্যে ক্ষেত্রপালের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই সব তথ্যই বলে দেয় যে, বাংলায় আড়াইশো- তিনশো বছর আগে ক্ষেত্রপালের পুজোর প্রচলন ছিল। তারকেশ্বর শিবতত্ত্ব অনুযায়ী, গ্রামের লোকেরা পশুবলি দিয়ে, পাথরে পুজো করে ক্ষেত্রপালের আরাধনা করে। বাংলায় বৌদ্ধ আমলেও ক্ষেত্রপাল পুজোর প্রচলন ছিল। হয়ত তার আরও আগে থেকেই ছিল। বৌদ্ধ যুগে মহাযানী বৌদ্ধরা বাংলার যে কয়েকটি লৌকিক দেবতাকে তাদের দেবকূলে স্থান দিয়েছিল তাদের মধ্যে ক্ষেত্রপাল বিশেষ স্থান পায়। কোনও কোনও স্থানে ধর্মরাজের পুজোয় চতুর্দিকের অধিপতি হিসেবে ক্ষেত্রপালের বন্দনা করা হয়। ব্রাহ্মণ পুরোহিতেরা দক্ষিণ রায়কে ক্ষেত্রপাল রূপে পুজো করেন, অর্থাৎ, এক কালে ক্ষেত্রপালের সঙ্গে দক্ষিণ রায়ের মিশ্রণ ঘটেছে বলেই অনুমান করা হয়। পুজোর সংস্কৃত ধ্যানমন্ত্রে, ক্ষেত্রপালের উল্লেখ পাওয়া যায়,
“ভ্রাজচ্চণ্ড জটাধরং ত্রিনয়নং নীলাঞ্জাদ্রি প্রভম
দোর্দণ্ডাভং গদা কপালমরুন স্রগগন্ধ বস্ত্রউজ্জ্বলম
বন্দেহ্ং সিত-সর্প-কুন্ডলং-ধরং। শ্রীক্ষেত্রপালংসদা।”
অর্থাৎ, “উজ্জ্বল ভয়ংকরজটাধারী, ত্রিনয়ন, নীল কজ্জ্বল ও পর্বতসদৃশ প্রভাবিশিষ্ট, দুই হাতে ধৃত গদা ও কপাল, রক্তবর্ণমাল্য, গন্ধ ও বস্ত্রে উজ্জ্বল, কটিতে বদ্ধ ঘণ্টার ঘর্ঘরশব্দের ভীষণ ঝংকারে ভয়ংকর, সাদা সর্পের কুণ্ডলধারী ভগবান ক্ষেত্রপালকে আমি বন্দনা করি।” এই বিবরণ অনুধাবন করলে ক্ষেত্রপালকে শিবের রূপান্তর বলে ধারণা হওয়া স্বাভাবিক। মৎসপুরাণে বর্ণিত ক্ষেত্রপালের মূর্তির যে বিবরণ রয়েছে সেখানে, ক্ষেত্রপালকে জটামণ্ডিত ও বিকৃতানন করে নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে। ক্ষেত্রপাল দিগম্বর , জটিল , কুকুর ও শৃগাল বেষ্টিত , তাঁর মস্তক কেশসমাবৃত, বাম হস্তে কপাল, দক্ষিণ হস্ত অসুরনাশিনী শক্তি প্রদান করে। শিব যে পশুপতি সেই পশুপতিত্বের ইঙ্গিত মেলে এখানে। মঙ্গলকাব্যগুলিতে দেখা যায়, স্বয়ং শিব কৃষিকার্য করছেন। যজুর্বেদের শতরুদ্রীয় স্তোত্রে রুদ্রকে ক্ষেত্রপতি বলা হয়েছে। তন্ত্রশাস্ত্রে শিবের একটি নাম ক্ষেত্রপাল বা ক্ষেত্রেশ। সুতরাং ক্ষেত্রপাল যে শিবেরই রূপান্তর, তাতে সংশয় নেই। তথাপি কেউ কেউ ক্ষেত্রপালকে অনার্য দেবতা বলে সিদ্ধান্ত করেছেন। ক্ষেত্রপালের গদা বিষ্ণুর কাছ থেকে গৃহীত। হাতে গদা এবং ক্ষেত্রপালের শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা থেকে অনুমান করা যায়, প্রাচীন যুগে ক্ষেত্রপালকে দিক রক্ষক দেবতা বলে গণ্য করা হত। কারণ গদা হল রক্ষকদের চিহ্ন। হয়ত এই গদাই পরবর্তী কালে পল্লি বাংলায় বংশদন্ডে রূপান্তরিত হয়েছে। বিশ্বকোষ -এর চতুর্থ খণ্ড অনুযায়ী ক্ষেত্রপালের অজর, আপকুন্ত, উন্মাদ প্রভৃতি ৪৯টি ভেদের কথা জানা যায়।
ক্ষেত্রপালের নির্দিষ্ট কোন মূর্তি নেই, সর্বত্র প্রতীকে এর পুজো হতে দেখা যায়। কাঁসার ঘট বা কলসি, একটি বাঁশ দন্ড এবং একটি থালার সাহায্যে ক্ষেত্রপালের প্রতীক অঙ্কন করা হয়। কোন কোন অঞ্চলে মাটির কলসি উপর বা পাশে একটি থালা স্থাপন করে ক্ষেত্রপালের প্রতীক স্থাপন করা হয়। চৈত্র সংক্রান্তির দিন ক্ষেত্রপালের বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। যদিও দোল পূর্ণিমার দিন থেকেই পুজো আরম্ভ হয়। পুজোর দিন সকালে পুরোহিত এবং বিশেষ ভক্তেরা বাঁশঝার থেকে একটি বাঁশ কেটে নিয়ে আসেন।
তারপর বাঁশের শাখা-প্রশাখাগুলো কেটে, বাঁশকে পুকুরে স্নান করানো হয়। এরপর বাঁশটিকে লাল কাপড়ে কীর্তন করতে করতে সারা গ্রাম প্রদক্ষিণ করা হয়। মাগন নেওয়া হয়, গ্রাম প্রদক্ষিণ করার সময় ধর্ম নির্বিশেষে সকল গ্রামবাসী বংশদন্ডটিকে শ্রদ্ধা জানায়। প্রদক্ষিণ চলাকালীন পুরোহিতকে চাল ও দক্ষিনা দেওয়া হয়। গ্রাম প্রদক্ষিণ শেষে ক্ষেত্রপালের পুজোর স্থায়ী জায়গায় বংশদন্ডটি পুঁতে রাখা হয়। দশ দিন ওই দন্ডটিকে পুজো করার পরে, নিকটস্থ পুকুরে বংশদন্ডটিকে রেখে দেওয়া হয়। আবার চৈত্র সংক্রান্তির দিন তা পুকুর থেকে তুলে আনা হয়। ঐ দিন মহাসমারোহে পুজো করা হয়।
ছবিঃ ক্ষেত্রপাল
এই দিনের পুজোর ক্ষেত্রপালের স্থায়ী প্রতীক কলসি ও থালা বার করে, কলসি, থালা এবং বংশদন্ডের সমন্বয়ে ক্ষেত্রপালের স্থায়ী প্রতীক তৈরি করা হয়। গ্রামে এই প্রতীকেই ক্ষেত্রপালকে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয়। পুজোয় নৈবেদ্য রূপে আমিষ ও নিরামিষ উভয় প্রকার দ্রব্য নিবেদন করা হয়। পুজোয় ক্ষেত্রপালের উদ্দেশ্যে চাল, দুধ এবং মিষ্টি দেওয়ার চল রয়েছে। কোন কোন জায়গায় পুজোতে মহিষ এবং ছাগল বলিও দেওয়া হয়। জবা বা অন্য লাল ফুল দিয়ে ক্ষেত্রপাল ঠাকুরের পুজো করা হয়। বাংলায় নানান গ্রামে যে ক্ষেত্র ঠাকুর ও ক্ষেত্র ঠাকুরানী পুজো করা হয়, তারাও আদপে ক্ষেত্রপালেরই রূপভেদ।
বর্ধমান জেলার পানাগড়, শ্যামসুন্দর ও ভাতার থানার কয়েকটি গ্রামে এখনও প্রচলিত ক্ষেত্রপাল পুজোর সুলুকসন্ধানও বলা যেতে পারে। বর্ধমান জেলার সর্বাধিক পরিচিত ক্ষেত্রপাল মন্দিরটি হল পানাগড় মিলিটারি ক্যাম্পের ক্ষেত্রপাল। পুরুষানুক্রমে চলে আসা এই পুজোর আনুমানিক বয়স পাঁচশো বছরেরও বেশি। বহু পুরনো একটি তেঁতুলগাছের নীচে ক্ষেত্রপাল মন্দিরটি অবস্থিত। ক্ষেত্রপাল এখানে প্রস্তরখণ্ড রূপে আছেন। প্রথমে ক্ষেত্রপালের অবস্থান ছিল খোলা আকাশের নীচে। বর্ধমান রাজপরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষেত্রপালের মাথার ওপর একটি ধাতুনির্মিত ছাতার মতো ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়। উত্তরবঙ্গে এবং অধুনা ওপার বাংলার চট্টগ্রামে ক্ষেত্রপালের পুজোর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আজ আধুনিককালের মহিমায় অনেক জায়গা থেকেই ক্ষেত্রপালের পুজো প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
[দ্বিতীয় পর্ব ...]
কলমে - কমলেন্দু সূত্রধর
তথ্যসূত্রঃ-
1. বাংলার দেবতা, অপদেবতা ও লোকদেবতা - মৃগাঙ্ক চক্রবর্তী
2. বাংলার লৌকিক দেবতা - গোপেন্দ্রকৃষ্ণ বসু
3. বাংলার লৌকিক দেবতা - রণদীপম বসু
4. বাঙ্গালির ইতিহাসঃ আদিপর্ব - নীহাররঞ্জন রায়
5. লোকউৎসব ও লোকদেবতা প্রসঙ্গ – ডঃ বরুণ কুমার চক্রবর্তী
6. বাংলার লোকসংস্কৃতি – ওয়াকিল আহমেদ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন