কর্নেলিয়া সোরাবজি — ভারতের প্রথম মহিলা আইনজীবী

 

কর্ণেলিয়া সোরাবজি 

"সাম্যের গান গাই-

আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!

বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।"

          (নারী -কাজী নজরুল ইসলাম)

 

ধ্যযুগের শেষ হয়ে আধুনিক যুগের সূচনা হয়ে গিয়েছে। ভারতবর্ষে তখন ইংরেজরা শাসন করছে। মধ্যযুগ থেকেই আমাদের দেশের মেয়েদের সামাজিক অবস্থান খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

ভারতে মেয়েদের অধিকার দেওয়া হয় না, শিক্ষার অধিকার নেই, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা খুব খারাপ - এইসব কথা শুনতে হত। এই সমস্যা কিন্তু বিদেশেও ছিল, প্রবল মাত্রায় ছিল। মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ করার অধিকার নিয়ে বিদেশেও অনেক রকম ছুৎমার্গ ছিল। সেই দেশের মেয়েদেরও অনেক লড়াই করতে হয়েছে।

আমরা এইবারের সংখ্যায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সাথে লড়ে নিজেকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া এক মহীয়সী নারীর কথা বলব, যিনি জন্মেছিলেন ভারতে। তাঁর পিতা জন্মগতভাবে পার্সি, মাতা জন্মগতভাবে হিন্দু ছিলেন, দেশের উন্নতিতে সাহায্য করেছেন, জনগণের সেবা করেছেন। নাম তাঁর কর্নেলিয়া সোরাবজি - বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা স্নাতক এবং ভারতের প্রথম মহিলা আইনজীবী।

জন্ম ও বংশ পরিচয় : 

জন্ম সালঃ ১৮৬৬ সালের ১৫ নভেম্বর

জন্ম স্থানঃ দেবলালি, নাসিক, মহারাষ্ট্র।

পিতাঃ রেভারেন্ড সোরাবজি কারসেদজি (জন্মগতভাবে পার্সি ছিলেন,আর কর্মগতভাবে খ্রিস্ট ধর্মপ্রচারক ছিলেন।)

 মাতাঃ ফ্রান্সিনা শান্তা ফোর্ড।

 মাতামহীঃ লেডি কর্নেলিয়া মারিয়া ডার্লিং ফোর্ড।

 আত্মীয়ঃ রিচার্ড সোরাবজি (ভাগ্নে)।

 ভাই-বোনঃ সুসি সোরাবজি (বোন), অ্যালিস পেনেল (বোন)।

৫ বোন ও ১ ভাই বেঁচে ছিলেন(২ জন ভাই ছোটবেলাতেই মারা গিয়েছিল )। মোট ৯ জন ভাইবোন ছিল।তাঁর পরিবার সংস্কার ও রীতিতে ছিল পার্সি, ধর্মে খ্রিষ্টান এবং ভাষা গুজরাটি ছিল।কর্নেলিয়ার ওপর বেশি প্রভাব ছিল তাঁর মা ফ্রান্সিনা শান্তা ফোর্ডের। ফ্রান্সিনা জন্মগতভাবে ছিলেন এক হিন্দু পরিবারের মানুষ। অনাথ আশ্রমে যাওয়ার পর এক ব্রিটিশ দম্পতি ফ্রান্সিনাকে দত্তক নেন এবং সেই পরিবারেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা, তখন তাঁর বয়স ছিল বারো। প্রগতিশীল, নারীস্বাধীনতায় বিশ্বাসী ফ্রান্সিনার চরিত্রের প্রতিফলন ঘটেছিল কর্নেলিয়ার মধ্যে।

 শিক্ষাজীবনঃ

প্রথম দিক

কর্নেলিয়ার ছোটবেলার প্রথমদিক বেলগাঁও ( Belgaum ) -এ কেটেছিল, পরের দিক পুনেতে কাটে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা বাড়ি ও মিশন স্কুল উভয় জায়গাতেই হয়। মিশন বিদ্যালয় তাঁর পিতার অধীনে ছিল। সেই হিসেবে বলা যায়, গৃহের বাইরে প্রাথমিক শিক্ষা পিতার অধীনে হয়।

পরবর্তী শিক্ষাজীবন ও আইন পড়ার জন্য জন্মস্থান ও বিদেশে লড়াইঃ

"আইন নয় পড়তে হবে ইংরাজি সাহিত্য নিয়ে" -

হ্যাঁ, এমনটাই শুনতে হয়েছিল কর্নেলিয়াকে! সাহিত্য পাঠ মেয়েদের কাজ, আইন বা বিজ্ঞানে মেয়েদের মাথা নেই - সমাজের মাথারা কিছু স্টিরিওটাইপ সৃষ্টি করেছিল।

কলেজে তাঁর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে লেকচার শুনতে বন্ধ করে দেওয়া হত। কারণটা হল, তিনি মেয়ে! মেয়েরা যদি ক্লাস করে তাহলে ছেলেদের জায়গা দখল করে নেবে যে! এত কিছু করেও কর্নেলিয়াকে দমানো যায়নি। তিনি নিজের স্বপ্ন শেষ পযর্ন্ত পূর্ণ করেছিলেন।

প্রথম মহিলা শিক্ষার্থী হিসাবে ডেকান কলেজে ভর্তি হন। বিষয় ছিল 'ইংরাজি সাহিত্য। তিনি তাঁর ব্যাচের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে এই কলেজ থেকে পাশ করেন। সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য তিনি সরকারি বৃত্তির অধিকারী হন। এই বৃত্তি তাঁকে ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। 

সোরাবজির বলেছিলেন, তাঁকে বৃত্তি থেকে প্রত্যাখ্যাত করা হয়েছিল কারণ কোনো নারীকে সেই বৃত্তি দেবার চল ছিল না। এরপর তিনি গুজরাটের একটি কলেজে অস্থায়ী ইংলিশ প্রফেসরের চাকরি করেন।

তিনি বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়েও উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করেন। প্রথম শ্রেণিতে অনার্স নিয়ে তিনি সেখান থেকে ডিগ্রি পান, হয়ে ওঠেন বোম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা স্নাতক।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় 

এরপর লক্ষ্য ছিল 'অক্সফোর্ড'!

তাঁর স্বপ্ন ছিল অক্সফোর্ডে আইন নিয়ে পড়বেন, কিন্তু এখানেও মেয়ে বলে নাকচ হয়ে গেলেন। তিনি কর্নেলিয়া দমতে জানতেন না! তাই হাল না ছেড়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে চিঠি লিখে পাঠালেন। সেই চিঠি পেয়ে তাঁদের টনক নড়ল! তিনি ১৮৮৮ সালে ন্যাশানাল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনকে ( এটি গঠন করেছিলেন মেরি কার্পেন্টার, ব্রিস্টলে ) তাঁর শিক্ষা সমাপ্ত করতে সাহায্য করার জন্যও চিঠি লেখেন।

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল বিলিতি মেয়েদের নিয়ে কর্নেলিয়ার জন্য  টাকা জোগাড়ের কাজ শুরু করলেন।ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল, অ্যাডিলেড ম্যানিং, স্যার উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন, মেরি হবহাউজ, আরথার হবহাউজ প্রমুখ অনেক বরেণ্য ইউরোপীয় মানুষজন এ ব্যাপারে তাঁদের সাহায্য করেছিলেন। এঁদের উদ্যোগেই কর্নেলিয়ার বিদেশযাত্রার খরচ যোগাতে তহবিল তৈরি হয়। ১৮৮৯ সালে শোরাবজি ইংল্যান্ডে পৌঁছান। অনেক আবেদন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৮৯২ সালে কংগ্রেগেশনাল ডিক্রি দ্বারা তাঁকে বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়, প্রথম মহিলা হিসাবে অক্সফোর্ডের সমারভিল কলেজ থেকে নাগরিক আইনে 'স্নাতকোত্তর ব্যাচেলর অফ সিভিল ল ' পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। প্রথম মহিলা হিসেবে এই পরীক্ষায় তিনি সফলভাবে পাশ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। শুধুমাত্র ভারত নয়, ব্রিটেনেও প্রথম মহিলা হিসেবে তিনি আইন পাশ করেছিলেন।

কর্মজীবন

১৮৯৪ সালে ভারতবর্ষে ফিরে এসে কর্নেলিয়া সহায়হীন নারীদের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু আদালতে তাঁদের পক্ষ নিয়ে আইনি লড়াই লড়ার সুযোগ কর্নেলিয়ার ছিল না, কারণ তখনও তিনি পেশাদার আইনজীবী হওয়ার ছাড়পত্র পাননি। তখন মহিলাদের আইনচর্চার লাইসেন্স দেওয়ার রীতিই ছিল না। এজন্য কর্নেলিয়া ১৮৯৭ সালে বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি পরীক্ষায় এবং ১৮৯৯ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টে আইনজীবীর পরীক্ষায় বসেন। দু'টি পরীক্ষাতেই তিনি সফল হন। তারপরও কাগজে-কলমে স্বীকৃতি আদায় হলেও কর্নেলিয়াকে ব্যারিস্টার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

১৯২০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় যখন তাদের ডিগ্রির শংসাপত্র দেওয়া শুরু করল, কর্নেলিয়া শোরাবজী পুনরায় লন্ডনে যান ডিগ্রি নিতে। ঠিক সেইসময় লন্ডনের আইনসভা আইনজীবীর ডিগ্রি নেওয়া যে কোনো মহিলাকেই আইনচর্চা করতে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। অবশেষে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং ১৯২৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টে ব্যরিস্টার হিসেবে নাম নথিভুক্ত করাতে সক্ষম হন। সেইজন্যই কর্নেলিয়া ছিলেন ভারতে এবং ব্রিটেনে প্রথম মহিলা আইনজীবী।

কর্মজীবনে নারী বলে অসম্মান

"দেখুন, আপনি তো পুরুষ নন। মহিলা। আর কোনও মহিলার হাতেই আইন নিয়ে ছেলেখেলা করার অধিকার তুলে দেওয়া যায় না।"  

-স্যার চার্লস সার্জেন্ট, বম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। বিলেত থেকে আইন পাশ করে বম্বে হাইকোর্টে প্র্যাটিস করতে আসা প্রথম মহিলা আইনজীবীকে এই কথা শুনতে হয়েছিল।ভারতের তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড কাজন, স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, কোনও মহিলা আইনজীবীকে পদের অধিকার দেওয়ার ইচ্ছা তাঁর নেই।

 কর্নেলিয়া ঠিক করলেন আবার বম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পরীক্ষায় বসবেন। তখন নিয়ম ছিল, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা সরাসরি ভারতীয় 'বার' এর সদস্যপদ পাবেন। প্রত্যাশিতভাবেই তিনি পরীক্ষায় পাশ করা সত্ত্বেও 'বার'-এর সদস্যপদ থেকে বঞ্চিত হলেন। তার কারণ, তিনি যে নারী!

 এলাহাবাদ হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করতে চেয়েছিলেন, পরিবর্তে পেলেন অপমান, প্রত্যাখ্যান! ব্রিটিশ চিফ জাস্টিস বিদ্রুপ করে বললেন, "আপনি সামনে দাঁড়ালে আমি তো ধমকও দিতে পারব না!"

অদ্ভুত কেস জুটত

বাধ্য হয়ে মহারাজাদের হয়ে লড়াই করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কেস-এর বহর দেখে কর্নেলিয়া মনে মনে কষ্ট পেতেন। নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো - এটা মনে করে ঐসব অদ্ভুতুড়ে কেসগুলি লড়তেন। এইভাবেই পাঁচ বছর কাটল।

কর্মজীবনে সাফল্য

সালটা ছিল ১৯২৩, মহিলাদের জন্য আনন্দের বছর। কারণ, সেই বছরই মহিলাদের আইন ব্যবসা করার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। তার আগে পযর্ন্ত কর্নেলিয়াকে কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য প্রচণ্ড লড়াই করতে হয়।

হেরে যাওয়ার পাত্রী কর্নেলিয়া ছিলেন না, তাই ১৯০২ সাল থেকেই তিনি ইন্ডিয়া অফিসে আবেদন শুরু করেন আইনি উপদেষ্টা হিসাবে প্রাদেশিক আদালতে নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতির জন্য। ১৯০৪ সালে বাংলার তত্ত্বাবধায়ক আদালতে তিনি মহিলা সহকারী নিযুক্ত হন।

কর্নেলিয়া কলকাতা হাইকোর্টেও কাজ করেছিলেন। সাময়িক সাফল্য পেয়েছিলেন, পুরো সফলতা তখনও অধরা। মামলায় সওয়াল করার বদলে কর্নেলিয়াকে শুধু মতামত প্রস্তুত করতে দেওয়া হত। গোটা কর্মজীবন জুড়ে পুরুষতান্ত্রিক প্রতিকূলতার জগদ্দল পাথর ঠেলতে ঠেলতে তাঁকে এগোতে হয়েছে। ধীরে ধীরে তাঁর কাজের পরিধি বাড়তে থাকে। বাংলা ছাড়াও বিহার, ওড়িশা, এবং আসামেও কাজ শুরু করেন।

এইভাবেই তিনি প্রায় ২০ বছর কাজ করেন। পান সফলতা।

সমাজ সংস্কারক হিসাবে

 একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবেও সেই সময় তাঁর অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ওম্যান ইন ইন্ডিয়া’-এর অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

 বাল্য বিবাহ, বিধবা নারীদের উপর অন্যায় অত্যাচার সম্পর্কে তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। 

বহু মহিলা ও অনাথ বাচ্চাদের হয়ে তিনি মামলা লড়েছেন। দীর্ঘ ২০ বছরে তিনি আনুমানিক ৬০০ মহিলা ও অনাথকে আইনি লড়াইয়ে সহায়তা করেছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যেও মহিলাদের সহায়তা দিয়েছেন।

মহারাষ্ট্রের সমাজকর্মী পন্ডিত রামাভাইকে তিনি সেবামূলক কাজে সাহায্য করেছিলেন।

পর্দানশীন নারীদের হয়ে লড়াই

বতর্মান সমাজেও কিছু মানুষ, সম্প্রদায়, জাতি বিশেষ মনে করে, যে মেয়ে যত নিজেকে ঢাকা দিয়ে রাখবে সে ততই ভদ্র হবে!

হিন্দু সমাজে বৈদিক যুগে পর্দাপ্রথা ছিল না। মেয়েরা অনেক স্বাধীন ছিল। পরবর্তীকালে মেয়েদের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়, চল হয় পর্দাপ্রথার! অবশ্য বর্তমান যুগে সেই স্বাধীনতাহরক পর্দাপ্রথার চল লুপ্ত হয়ে গেছে। এইজন্য বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপক হলেন আইনজীবী কর্নেলিয়া।

কর্নেলিয়া আইনি পরামর্শদাতা হয়ে পর্দানশীনদের মামলা হাতে নেন। পর্দানশীন বিধবাদের তাঁদের স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার স্বীকৃত করতে এবং মহিলাদের পড়াশোনা ও চাকরির ক্ষেত্রে সহায়তা করেন তিনি।

 'পর্দা পার্টি'- এর আয়োজন 

কর্নেলিয়ার তত্ত্বাবধানে এই পার্টির আয়োজন করা হত। এখানে পর্দাশীন মেয়েরা নিজেদের মধ্যে মেলামেশা ও আলাপ-আলোচনা করতেন। নিজেদের সমস্যার কথা খুলে বলতেন। 

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে কর্নেলিয়া

কর্মজীবনের প্রথম দিকে তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকেও সমর্থন জানিয়েছেন। যদিও পরের দিকে হিন্দু গোঁড়ামি, জাতীয়তাবাদের নামে বৈচিত্র্য ধ্বংসের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন। তিনি ভারতের পরম্পরা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে সমর্থন করতেন।

১৯২০ সালের পর থেকে তাঁর ভাবনাচিন্তার পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। স্বাধীনতা জন্য আন্দোলন তিনি সমর্থন করতেন না। ১৯২৭ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা করতে থাকেন। তিনি মনে করতেন ব্রিটিশরাজ ভারতের জন্য ভালো! তিনি গান্ধীজীর স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করতেন না। তিনি মনে করতেন, জনগণের মধ্যে অস্থিরতার সৃষ্টির পেছনে গান্ধীজী দায়ী!

বিশেষ সম্মান

গুগল ডুডলে সম্মান - ১৫ ই নভেম্বর ২০১৭ সালে তাঁর ১৫১ তম জন্মদিন উদযাপন। 

১৫১তম জন্মদিন উপলক্ষে গুগলের বিশেষ ডুডল

গুগল ডুডলে যে ছবিটি দেওয়া হয়েছে তা যশজ্যোত সিং হনসের তৈরি। ছবিতে এলাহাবাদ হাইকোর্টের সামনে রাখা হয়েছে কর্নেলিয়াকে। গুগল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, প্রচণ্ড বিদ্বেষের মধ্যেও তাঁর অধ্যাবসয়ের কথা স্মরণ করেই গুগল ডুডল তাঁর জন্মবার্ষিকীতে কর্নেলিয়াকে সম্মান জানিয়েছে।

এছাড়াও,

সোরাবজি ছিলেন প্রথম মহিলা যিনি ১৮৯০ সালে স্যার উইলিয়াম আনসনের আমন্ত্রণে অক্সফোর্ডের অল সোলস কলেজের কড্রিংটন লাইব্রেরিতে পাঠক হিসেবে ভর্তি হন।

কাইসার-ই-হিন্দ - স্বর্ণপদক পান ১৯০৭ সালে।

১৯১২ সালে 'লিঙ্কন'স ইন' লাইব্রেরিতে তাঁর একটি মূর্তি উন্মোচিত করা হয়।

শেষ জীবন

 লেখালেখির জগতেঃ 

 ১৯২৯ সালে তিনি ব্যারিস্টারি থেকে অবসর নেন।শেষ বয়সে তিনি লন্ডনে থাকতেন। মাঝে মাঝে শীতকালে ভারতে আসতেন। নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু বই। এছাড়া লিখেছেন গল্প, নিবন্ধ ইত্যাদি।অবসর নেওয়ার আগে থেকেই তিনি লেখার জগতে প্রবেশ করেন। অবসর নেওয়ার পর লেখালেখিতে অনেকটা সময় দিতেন।

 তাঁর লেখা কিছু বইয়ের নামঃ

লাভ অ্যান্ড লাইফ বিয়র দ্য পর্দা (১৯০১)

সান-বেবিজ : স্টাডিজ ইন দ্য চাইল্ড লাইফ অফ ইন্ডিয়া  ( ১৯০৪ )

বিট্যুইন দ্য ট্যুইলাইটস : বিইং স্টাডিজ অফ ইন্ডিয়া উইমেন বই ওয়ান অফ দেমসেলভস ( ১৯০৮ )

দ্য পরদানশিন্ ( ১৯১৭ )

দেয়ারফোর : অ্যান ইমপ্রেশন অফ শোরাবজী কারসেদজী লঙ্গরানা অ্যান্ড হিস ওয়াইফ ফ্রান্সিনা ( ১৯২৪ )

গোল্ড মোহর : টাইম টু রিমেম্বার ( এই একটি নাটক, প্রকাশিত হয় ১৯৩০ সালে )।

সুসি শোরাবজি, খ্রীষ্টান-পার্সি এডুকেশন : এ মেমেয়ার ( এই বইটি আসলে বোন সুসি শোরাবজীর জীবনী, প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালে )।

'ইন্ডিয়া কলিং : দ্য মেমোরিস অফ কর্ণেলিয়া শোরাবজি ' ( এই একটি আত্মজীবনীমূলক বই, প্রকাশিত হয় ১৯৩৪ সালে )।

'ইন্ডিয়া রিকল্ড' ( এটিও আত্মজীবনীমূলক বই, প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে ) ।

গান্ধিজীর সাথে সাক্ষাৎঃ

১৯৩২ সালে গান্ধীজী গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য লন্ডনে যান। একটি ব্রিটিশ জার্নালের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার নিতে তিনি গান্ধীজীর সাথে দেখা করেন। সেই সাক্ষাৎকার চলার সময় কোনো একটি বিষয়ে মতবিরোধ হয় এবং তিনি বিরূপ মন্তব্য করে বসেন। গান্ধীজী সেই মন্তব্য শুনে রেগে যান। ফলে, গান্ধীজী মাঝপথে সাক্ষাৎকার থামিয়ে চলে যান। এই ঘটনা পরবর্তীকালে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়।

চিরবিদায় ( লন্ডন )ঃ

৬ ই জুন, ১৯৫৪ সালে ৮৭ বছর বয়সে ইহলোক ছেড়ে পরলোকের পথে পাড়ি দেন।

ভারতবর্ষ কর্ণেলিয়া সোরাবজির অবদান মনে রাখবে। প্রথম মহিলা আইনজীবী হিসাবে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়।

_____________


কলমে - সো মা  লা ই 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন